‘ধর্ষণে ব্যর্থ হয়েই শিশু লিজাকে হত্যা’, অঙ্গহানির তদন্ত চলছে

নিখোঁজের আটদিন পর লাশ উদ্ধার হওয়া কিশোরী লিজাকে (১০) ধর্ষণের উদ্দেশ্যে অপহরণ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের দাবি, ধর্ষণে ব্যর্থ হয়েই শ্বাসরোধ করে লিজাকে হত্যা করা হয়। তবে কিডনি, লিভারসহ লিজার লাশের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানির ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে।
আজ সোমবার দুপুর ১টার দিকে শরীয়তপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এহসান শাহ।
এহসান শাহ জানান, লিজা নিখোঁজ হওয়ার দিন থেকে এলাকায় ছিলেন না সরদারকান্দি গ্রামের ফরিদ শেখ (৩২)। লিজার পরিবারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রোববার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফরিদকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে লিজাকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি।
ফরিদকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, একই গ্রামের জাকির হোসেন শেখ (৩০) লিজার চাচাতো ভাই। তিনি লিজাকে তাঁর কাছে এনে দেওয়ার জন্য ফরিদকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। ফরিদ শেখ কৌশলে জাকির শেখের মামা আলাউদ্দিন শেখের একটি বাড়ির পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যান। সেখানে দিনের বেলায় কোনো লোক থাকে না। ওই সময় জাকির লিজাকে কুপ্রস্তাব দেন। কিন্তু সে রাজি না হওয়ায় জাকির ও ফরিদ মিলে লিজাকে গলা টিপে হত্যা করেন এবং ওই ঘরের খাটের নিচে কাঁথা দিয়ে লাশটি ঢেকে রাখেন।
পুলিশ জানায়, এরপর তাঁরা দুজন স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যান। পরে ওই দিন রাতেই নিজেদের সুবিধামতো সময়ে একটি ভ্যানে করে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ছৈয়ালকান্দি এলাকায় বুলবুল সরদারের পাটক্ষেতের পাশের পানিতে লিজার লাশ ফেলে যান। এরপর জাকির ও ফরিদ দুজন ঢাকায় চলে যান। কয়েকদিন পর আবার বাড়ি ফিরে আসেন তাঁরা।
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় লিজা বাড়িতে না ফেরায় তাঁর বাবা-মা অনেক খোঁজাখুঁজির পর ১৬ জুলাই সখিপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে লিজার বাবা-মা ফরিদ শেখকে একটু সন্দেহের চোখে দেখছিলেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা এহসান শাহ। কারণ ফরিদ মাঝেমধ্যে লিজাকে টাকা-পয়সা দিতেন এবং ওর সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন।
নিখোঁজের আটদিন পরে গত শনিবার সকালে ছৈয়ালকান্দি পাটক্ষেতের পাশে স্থানীয় লোকজন ভাসমান অবস্থায় লিজার অর্ধগলিত লাশ দেখতে পায়। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে লিজার চাচি নাছরিন গিয়ে জামাকাপড় দেখে লাশ শনাক্ত করেন। সখিপুর থানার পুলিশ খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে হতবাক হয়ে যান চিকিৎসকরা। কারণ তাঁরা দেখতে পান যে লিজার শরীরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ নেই।
ময়নাতদন্ত শেষে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক শেখ এহসানুল হক বলেন, শিশুটির শরীরে কিছু অংশে পচন ধরেছে। হাত-পা অক্ষত থাকলেও হাতের কবজি কাটা ছিল। তার শরীরে কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড পাওয়া যায়নি। মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়েছিল কি না তা পরীক্ষা করার জন্য দেখতে গেলে দেখা যায় তার জরায়ুও নেই।
ফরিদ শেখের স্বীকারোক্তির পর গতকাল রাতে লিজার বাবা লেহাজ উদ্দিন শেখ বাদী হয়ে সখিপুর থানায় দুজনকে আসামি করে মামলা করেন। এই মামলায় জাকিরকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ফরিদ শেখকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এ ছাড়া লিজার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানির বিষয়টি মাথায় রেখেই মামলার অধিকতর তদন্ত চলছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।