পর্যবেক্ষণের নামে জাতির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে : হানিফ
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/08/12/photo-1502555082.jpg)
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, আদালতের বিচার্য বিষয়ের বাইরে পর্যবেক্ষণের নামে জাতির মধ্যে নতুন করে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতার একক নেতৃত্বের কথা বলতে চান না, তাঁরা স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছেন।
আজ শনিবার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডা. কাইছার রহমান চৌধুরী মিলনায়তনে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের প্রসঙ্গে এ কথা বলেন হানিফ। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী প্রশিক্ষণ এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ষোড়শ সংশোধনীর রায় প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, ‘আমি আদালতের রায় নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। কিন্তু আদালতের বিচার্য বিষয়ের বাইরে যে পর্যবেক্ষণের কথা বলে জাতির মধ্যে একটা নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে, সেই কথাটি আমরা বলতে চাই। রায়ের পাশে পর্যবেক্ষণে বলেছেন, অনেক কথা বলেছেন, সংসদ নিয়ে কটাক্ষ করে কথা বলেছেন। সংসদের কথা বলেছেন যে, সংসদ সদস্যরা অপরিপক্ব। তাঁরা নিজেরাই যোগ্য কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।’
‘আজকে যিনি এ রায় দিচ্ছেন, আপনারা কার দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত? এই সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে গঠিত সরকার, সেই সরকারের রাষ্ট্রপতি দ্বারা আপনারা নিয়োগপ্রাপ্ত। সংসদ যদি অপরিপক্ব হয়, সংসদ যদি অযোগ্য হয়, তাহলে আপনারা অযোগ্য ব্যক্তির দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে আজকে এ ধরনের কথা বলছেন। এটা জাতি কখনো আপনাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করে নাই।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘আপনারা স্বাধীনতার কথা বলেছেন, বলেছেন স্বাধীনতা কোনো একক ব্যক্তির নেতৃত্বে হয় নাই। তাহলে কার নেতৃত্বে হয়েছে, জাতি জানতে চায়। নতুন করে কেন এই বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে, স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে বিএনপি-জামায়াত বহুবার বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। স্বাধীন পাকিস্তানের তাবেদার যারা, যারা একাত্তরের পরাজিত শক্তি, একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী, তারাই স্বাধীনতা নিয়ে বারবার বিতর্কের চেষ্টা করেছে।’
‘যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নয়, তারাই স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। জাতির পিতার নির্দেশে আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম, এখানে জাতির পিতার বাইরে অন্য কারো নেতৃত্বের কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। যারা আজকে এই একক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কথা বলতে চান, তাঁরা মূলত স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছেন।’
মাহবুব-উল-আলম হানিফ আরো বলেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই, যে যেখানেই অবস্থান করুন না কেন, আপনারা সেই অবস্থানের মর্যাদা নিজেরা রক্ষা করবেন। সাংবিধানিক পদে থেকে আপনি ইতিহাস বিকৃত করবেন, মুক্তিযুদ্ধের-স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করবেন, এটা বাংলাদেশের জনগণ কখনো মেনে নেবে না।’
অনুষ্ঠানে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করে হানিফ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন করে যে বিভাজন তৈরি করেছে, তাঁর কারণে দেশ আজ বারবার হোঁচট খাচ্ছে। জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার করে যদি এর প্রকৃত তথ্য বের করে আনা যায়, তাহলেই বিভাজন দূর হবে। আর এই বিভক্ত জাতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব।’
হানিফ বলেন, ‘আজকে যদি গোটা বিশ্বের রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখা যায়, ‘আমরা যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন এবং অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এমনকি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতেও দেখি, সেখানে সকল ক্ষমতা জনগণের হাতে। আমাদের ’৭২-এর সংবিধানে সেটাই ছিল। কিন্তু ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে এই ক্ষমতা কেড়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করে দিয়েছিলেন। কথাগুলো আপনাদের জানতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আগতদের উদ্দেশে হানিফ বলেন, ‘আপনারা আলেম সম্প্রদায় এখানে আছেন। আপনারা বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কথা বলেন, অনেক বক্তব্য দেন। সাধারণ মানুষের কথা বলেন, জনগণের কথা বলেন, তাই এই কথাগুলো আপনাদের জানতে হবে জেনে আপনাদের বলতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সে সম্পর্কে জাতিকে আপনাদেরই সজাগ করতে হবে।’
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বেগম আখতার জাহান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার সরদার তমিজ উদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিজবাহুর রহমান চৌধুরী ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল।