প্রতিবাদ জানিয়ে অধিদপ্তর বলল, আংশিক বস্তুনিষ্ঠ
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/07/20/photo-1437399804.jpg)
এনটিভি অনলাইনে ‘তিন দশকের রেকর্ড ভাঙলেন কৃষিমন্ত্রী : ৩৬ জনকে ডিঙিয়ে নিয়োগ পেলেন মহাপরিচালক’ শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তর বলছে, প্রতিবেদনটি আংশিক বস্তুনিষ্ঠ।
গত ১৬ জুলাই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। রোববার (১৯ জুলাই) এনটিভি অনলাইনের মেইলে প্রতিবাদপত্রটি পাঠান অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন)-এর দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপপরিচালক (প্রশাসন-২) ড. জি এম ফারুক ডন। সোমবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে আমি প্রতিবাদপত্রটি পাঠিয়েছি।’
জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় স্থবিরতা নেমে আসে উল্লেখ করে প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, ‘মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি একান্তই যুক্তিযুক্ত ও প্রত্যাশিত ছিল।’
এতে আরো বলা হয়, ‘জননেত্রী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী দিক-নির্দেশনায় এবং তাঁর সরকারের সুযোগ্য মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপির নিষ্ঠা ও দক্ষতায় পরিচালিত কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্জন নানা মাত্রায় দৃষ্টান্তবহুল। বর্তমান সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে এবং ২০০৯ থেকে অদ্যাবধি তিনি এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনে যে অসামান্য সাফল্যের নজির স্থাপন করেছেন তা দেশে-বিদেশে বিপুলভাবে অভিনন্দিত হয়েছে।’
প্রতিবাদপত্রে আরো বলা হয়, ‘কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে অধিকতর গতিশীল ও কর্মক্ষম করার জন্য তিনি ইতোমধ্যেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে জনাব মো. হামিদুর রহমানের নিয়োগ সেসব পদক্ষেপেরই একটি অংশ।’
‘অধিদপ্তরে ধারাবাহিকভাবে স্বল্পকালীন মেয়াদে (জ্যেষ্ঠ্তার ভিত্তিতে) মহাপরিচালক নিয়োগের ফলে সংস্থাটির অগ্রযাত্রা বিশেষ করে মাঠ কার্যক্রম এবং প্রশাসন ব্যবস্থাপনায় স্থবিরতা নেমে আসে,’ উল্লেখ করা হয় পত্রে।
পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে কৃষিমন্ত্রী এ নিয়োগ দিয়েছেন জানিয়ে পত্রে বলা হয়, ‘এই পরিস্থিতির উন্নয়নকল্পে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘমেয়াদে একজন দক্ষ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি একান্তই যুক্তিযুক্তও প্রত্যাশিত ছিল। মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি সেই বিবেচনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মধ্যে দক্ষ, সৎ ও নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা হিসেবে সুপরিচিত জনাব মো. হামিদুর রহমানকে বিগত ৩০ জুন তারিখে মহাপরিচালকের দায়িত্ব অর্পণ করে সেই প্রত্যাশা পূরণের দৃষ্টান্ত রেখেছেন মাত্র।’
প্রতিবাদপত্রে দাবি করা হয়, ‘প্রকাশিত প্রতিবেদনে মো. হামিদুর রহমানকে মহাপরিচালক নিয়োগের ফলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে বলে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তাও নিতান্তই ভিত্তিহীন ও অসত্য। প্রকৃত তথ্য এই যে জনাব মো. হামিদুর রহমানকে মহাপরিচালক পদে নিয়োগ করা হয়েছে এই সংবাদ জানামাত্রই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে আনন্দ ও স্বস্তির বিপুল প্রকাশ ঘটেছে।’
এ ছাড়া ‘মহাপরিচালক নিয়োগের ব্যাপারে জনাব হামিদুর রহমানের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মাননীয় কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য গ্রহণের বিষয়ে বলা হয়, মাননীয় কৃষিমন্ত্রী এলাকায় আছেন বলে তাঁর বক্তব্য বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে সেদিন মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ঢাকায় ছিলেন,’ বলা হয় প্রতিবাদপত্রে।
হামিদুর রহমান মহাপরিচালক পদে নিযুক্ত হওয়ার আদেশের প্রতিবাদকারী একজন কর্মকর্তাকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় খামারবাড়ির বাইরে বদলি করা হয়েছে বলে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা মিথ্যা বলে দাবি করা হয়েছে পত্রে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য :
প্রতিবাদপত্রে ৩৬ জনকে ডিঙিয়ে বর্তমান মহাপরিচালক হামিদুর রহমানের নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টিকে অস্বীকার করা হয়নি। বরং বলা হয়েছে, নিয়োগটি ‘সকল প্রতিষ্ঠানকে অধিকতর গতিশীল ও কর্মক্ষম করার জন্য’ নেওয়া ‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক পদক্ষেপের’ অংশ। ফলে আমাদের প্রতিবেদনটির মূলভাষ্য অধিদপ্তর স্বীকারই করেছে।
সংবাদটি প্রকাশের দিন কৃষিমন্ত্রী ঢাকায় থাকতে পারেন। কিন্তু এর আগের এক সপ্তাহে অর্থাৎ প্রতিবেদন লেখার সময়ে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কৃষিমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়, তিনি ঢাকায় নেই, এলাকায় আছেন। এ ছাড়া কৃষিমন্ত্রীর যেসব ফোন নম্বর দেওয়া আছে সেসব নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
হামিদুর রহমানকে মহাপরিচালক নিয়োগে ক্ষোভ ও হতাশাসহ বদলির বিষয়টি অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তাই এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থাকায় কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
ফলে আমাদের প্রতিবেদনটি যথার্থ ও বস্তুনিষ্ঠ বলেই প্রতীয়মান হয়।