সাকার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আজ বুধবার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
urgentPhoto
সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ ২৩টি অভিযোগ দাখিল করেছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। এর মধ্যে নয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালে। প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। বাকি পাঁচটি অভিযোগের ২, ৪ ও ৭ নম্বর অভিযোগে ২০ বছর করে ৬০ বছর এবং দুটি অভিযোগে পাঁচ বছর করে ১০ বছরসহ সর্বমোট ৭০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সাকার বিরুদ্ধে অন্য ১৪টি অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁকে এসব অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়। এর মধ্যে ছয়টি অভিযোগের বিষয়ে প্রসিকিউশন কোনো সাক্ষ্য হাজির করতে পারেনি।
ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ডের মধ্যে আপিল বিভাগ ৭ নম্বর অভিযোগে ২০ বছরের কারাদণ্ড বাতিল করে খালাস দেন সাকা চৌধুরীকে। এতে তাঁর কারাদণ্ডের মেয়াদ কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ বছর।
সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ :
১ নম্বর অভিযোগ (খালাস) : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যের বিরুদ্ধে আনা ১ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৪ বা ৫ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে পাকিস্তানি সৈন্যদের ভয়ে চট্টগ্রাম শহরের শহীদ মতিলাল চৌধুরীর রামজন লেনের বাসভবনে মতিলাল চৌধুরী, অরুণ চৌধুরী, যোগেশ চন্দ্র দে, পরিতোষ একত্রিত হন। সেখান থেকে পাকিস্তানি সৈন্যের সহায়তায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী সোবহান ছয়জনকে অপহরণ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাসভবনে নিয়ে যান। সেই ছয় ব্যক্তির আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে খালাস দেন।
২ নম্বর অভিযোগ (প্রমাণিত) : প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনা ২ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সৈন্যরা চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরা গ্রামে হিন্দু অধ্যুষিত পাড়ায় অভিযান চালিয়ে ওই এলাকার শতাধিক ব্যক্তিকে হিন্দু ডাক্তার মাখন লাল শর্মার বাড়িতে জড়ো করেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে পাকিস্তানি সৈন্যরা সেখানে তাঁদের ব্রাশফায়ার করে হত্যা করেন। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে ২০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
৩ নম্বর অভিযোগ (প্রমাণিত) : প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনা ৩ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে পাকিস্তানি সৈন্যরা রাউজানের গহিরা শ্রী কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এ সময় নিজে নূতন চন্দ্র সিংহকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাকাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
৪ নম্বর অভিযোগ (প্রমাণিত) : প্রসিকিউশনের ৪ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে নিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত জগৎমল্লপাড়ায় অভিযান চালান। এ সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দুই সহযোগীর ডাকে সেখানকার হিন্দু নর-নারী কিরণ বিকাশ চৌধুরীর বাড়ির আঙিনায় জড়ো হয়। সেখানে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে তাঁদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে ৩২ জন নারী-পুরুষ মারা যান। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে ২০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
৫ নম্বর অভিযোগ (প্রমাণিত) : প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনা পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল দুপুর ১টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাঁর অনুসারীদের নিয়ে চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে হামলা চালান। সেনাসদস্যরা বণিকপাড়ায় প্রবেশ করে ধর্মীয় বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে অভিযান চালিয়ে নেপাল চন্দ্র ধর, মনীন্দ্র লাল ধর, উপেন্দ্র লাল ধর ও অনিল বরণ ধরকে গুলি করে। এতে প্রথম তিনজন শহীদ ও শেষের জন আহত হন। হত্যাকাণ্ড শেষে বাড়িঘরে আগুন দিয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তাঁর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী তাঁদের অনুসারী ও পাকিস্তানি সৈন্যদের নিয়ে সুলতানপুর গ্রাম ত্যাগ করেন। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
৬ নম্বর অভিযোগ (প্রমাণিত) : এ অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল বিকেল ৪টায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় ক্ষীতিশ মহাজনের বাড়ির পেছনে পুকুরপাড়ে শান্তি মিটিংয়ের নামে হিন্দু নর-নারীদের একত্রিত করে পাকিস্তানি সৈন্যরা ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
৭ নম্বর অভিযোগ (খালাস) : মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে পাকিস্তানি সৈন্যরা রাউজান পৌরসভার সতীশ চন্দ্র পালিতের বাড়িতে প্রবেশ করে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে এবং তাঁর লাশ কাঁথা-কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে তাতে পাউডার ছিটিয়ে আগুন দিয়ে লাশ পুড়িয়ে ফেলে। এ অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়, তাঁকে ২০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে আপিল বিভাগ এ অভিযোগ থেকে সাকাকে খালাস দেন।
৮ নম্বর অভিযোগ (প্রমাণিত) : এ অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তাঁর ছেলে শেখ আলমগীরসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য প্রাইভেটকারযোগে চট্টগ্রামের রাউজান থেকে চট্টগ্রামে শহরে আসছিলেন। পথে হাটহাজারী থানার খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি তিন রাস্তার মোড়ে পৌঁছামাত্র সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে থাকা পাকিস্তানি সৈন্যরা শেখ মোজাফফর আহম্মেদ ও তাঁর ছেলে শেখ আলমগীরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে স্থানীয় পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাঁদের আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
৯ নম্বর অভিযোগ (খালাস) : সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনা এ অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালীতে আসেন। একটি জিপে করে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী একই সঙ্গে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানায় রাজাকার ক্যাম্পে আসেন। বোয়ালখালী থানার কদুরখিল গ্রামে যাওয়ার সময় মুন্সিরহাটের শান্তি দেবকে ধরে নিয়ে আসে। তাঁকে থানার উত্তর পাশে বণিকপাড়ায় গুলি করে হত্যা করে। অনতিদূরে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তখন ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন। এ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
১০ নম্বর অভিযোগ (খালাস) : ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল পাকিস্তানিরা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে ডাবুয়া গ্রামে মানিক ধরের বাড়িতে এসে তাঁর জিপ গাড়ি ও ধান ভাঙার কল লুট করে নিয়ে যায়। মানিক ধর সাকা চৌধুরীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে থানায় মামলা দায়ের করে। এ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
১১ নম্বর অভিযোগ (খালাস) : ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল সকালবেলা কনভেনশন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী ও তাঁর ছেলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে তাঁদের অনুসারী এবং পাকিস্তানি সৈন্যরা চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানার হিন্দু অধ্যুষিত শাকপুরা গ্রামে অভিযান চালিয়ে হিন্দুদের হত্যা করে। এ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
১২ নম্বর অভিযোগ (খালাস) : ১৯৭১ সালের ৫ মে সকাল সাড়ে ১০টায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে পাকিস্তানি সৈন্যরা রাউজান থানার জ্যোতিমল্ল গ্রামে গুলি করে বিজয় কৃষ্ণ চৌধুরী রাখাল, বিভূতিভূষণ চৌধুরী, হিরেন্দ্র লাল চৌধুরীকে হত্যা করে। এ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
১৩ নম্বর অভিযোগ (খালাস) : ১৯৭১ সালের ১৫ মে সন্ধ্যার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে শান্তি কমিটির সদস্য আলী আহম্মদ পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে নিয়ে ঘাসিমাঝির পার এলাকায় আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বাড়িঘরে আক্রমণ করে লুটপাট, ছয়জনকে গুলি করে হত্যা, দুজনকে গুরুতর আহত এবং অন্তত পাঁচ নারীকে ধর্ষণ করে। নিহতরা হলেন নূরুল আলম, আবুল কালাম, জানে আলম, মিয়া খাঁ, আয়েশা খাতুন ও সালেহ জহুর। এ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
১৪ নম্বর অভিযোগ (খালাস) : ১৯৭১ সালের ২০ মে বিকেল ৪টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সৈন্যরা চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার পথেরহাটের কর্তার দীঘিরপাড়ে হানিফকে আটক করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণাধীন ও পরিচালনাধীন গুডসহিল নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে এক হাজার টাকা মুক্তিপণ দিতে না পারায় হানিফকে হত্যা করা হয়। এ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
১৫ নম্বর অভিযোগ (খালাস) : ১৯৭১ সালের মে মাসের মাঝামাঝিতে পাকিস্তানি সৈন্যরা শেখ মায়মুন আলী চৌধুরীকে আটক করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর গুডসহিল নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও ফজলুল কাদের চৌধুরীর নির্দেশে পরনের জাঙ্গিয়া ছাড়া সব কাপড়চোপড় খুলে ফেলে হাত-পা বেঁধে তাঁকে দৈহিক নির্যাতন করা হয়। এ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
১৬ নম্বর অভিযোগ (খালাস) : ১৯৭১ সালের ৭ জুন জামাল খান রোড থেকে ওমর ফারুককে ধরে নিয়ে ফজলুল কাদের চৌধুরী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণাধীন গুডসহিলের নির্যাতন সেলে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। এ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
১৭ নম্বর অভিযোগ (প্রমাণিত) : ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলার কোতোয়ালি থানার হাজারী লেনের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পোড়োবাড়ী থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ, সিরাজ ও ওয়াহেদ ওরফে ঝুনু পাগলাকে অপহরণ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর গুডসহিলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দেড় ঘণ্টা তাঁদের শারীরিক নির্যাতন করা হয়। পরে ওই দিন রাত ১১/১২টার দিকে নিজাম উদ্দিন ও সিরাজকে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে গিয়ে কারারুদ্ধ করা হয়। সেখানে তাঁরা দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত বন্দি ছিলেন। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
১৮ নম্বর অভিযোগ (প্রমাণিত) : ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে তৃতীয় সপ্তাহে একদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা চট্টগ্রাম জেলার চান্দগাঁও থানার মোহারা গ্রামে আবদুল মোতালেব চৌধুরীর বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তাঁরা সালেহ উদ্দিনকে অপহরণ করেন। এর পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গাড়িতে নিয়ে তাঁকে গুডসহিল নির্যাতন সেলে নেওয়া হয়। সেখানে বাড়ির বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে থাকা সাকা চৌধুরীর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী এবং ছোট ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় সালেহ উদ্দিনকে উদ্দেশ করে ফজলুল কাদের চৌধুরী জানতে চান, তিনি সালেহ উদ্দিন কি না? এ সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এগিয়ে গিয়ে সালেহ উদ্দিনের বাঁ গালে সজোরে একটি চড় মারেন। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
১৯ নম্বর অভিযোগ (খালাস) : মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাটহাজারীর নেয়ামত আলী রোডের সাহেব মিয়ার বাড়ি ঘেরাও করে তাঁর দুই ছেলে নুর মোহাম্মদ ও নুরুল আলমকে অপহরণ করা হয়। এর পর রশি দিয়ে বেঁধে গুডসহিল নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের অপর ভাই মাহবুব আলমের সন্ধান পান। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নুর মোহাম্মদ ও নুরুল আলমকে ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে গুডসহিলের নির্যাতন কেন্দ্র থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
২০ নম্বর অভিযোগ (খালাস) : ১৯৭১ সালের ২৭/২৮ জুলাই বিকেল ৩/৪টার দিকে রাজাকার বাহিনীর আকলাচ মিয়াকে ধরে নিয়ে যায়। এর পর তাঁকে গুডসহিলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। সেখানে তাঁর মৃত্যু ঘটে। এ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
২১ নম্বর অভিযোগ (খালাস) : মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে ৫/৭ তারিখের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার বিনাজুরি গ্রামের ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী একই জেলার কোতোয়ালি থানার জেল রোডে অবস্থিত নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাগজের দোকানে যান। সেখান থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাঁকে অপহরণ করে গুডসহিলে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে ৩/৪ দিন আটক রেখে নির্যাতন করা হয়। এ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
২২ নম্বর অভিযোগ (খালাস) : ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ দিকে এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালে রাত আনুমানিক ৯টায় মো. নুরুল আনোয়ারকে অপহরণ করা হয়। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তাঁর সহযোগী আলশামস বাহিনীর সদস্যরা মৃত আশরাফ আবদুল হাকিম চৌধুরীর বাসভবন ৪১/২ স্ট্যান্ড রোড সদরঘাট, থানা ডবলমুরিং জেলা চট্টগ্রাম থেকে তাঁকে অপহরণ করে গুডসহিলে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী মো. নুরুল আনোয়ারের কাছ থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করেন। এ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
২৩ নম্বর অভিযোগ (খালাস) : ১৯৭১ সালের ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক সোয়া ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী মুসলিম ছাত্র পরিষদের সভাপতি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের আলমাস কমান্ডার হামিদুল কবির চৌধুরী খোকা, মাহবুব, সৈয়দ ওয়াহিদুর আলম গং চট্টগ্রাম জেলার কোতোয়ালি থানার ৪০ আবদুস সাত্তার রোড এলাকার এম সলিমুল্লাহর একজন হিন্দু কর্মচারীকে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগের ভিত্তিতে মারধর করতে থাকেন। তাঁদের অভিযোগ হলো, ওই হিন্দু কর্মচারী বিহারিদের ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছেন। এম সলিমুল্লাহ এতে বাধা দিলে তাঁকে গুডসহিলে নির্যাতন সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সারা রাত নির্যাতন শেষে তাঁর আত্মীয়দের অনুরোধে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।