সেই সোনিয়ার লাশ ৬ দিন পর কবর থেকে উত্তোলন

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেধাবী ছাত্রী রহিমা আক্তার সোনিয়ার মরদেহ পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য দাফনের ছয়দিন পর কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের নির্দেশে আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহরাব হোসেনের উপস্থিতিতে সোনিয়ার লাশ উত্তোলন করা হয়।
এ সময় তেঁতুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেস চন্দ্র, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুস সবুর, ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া, তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কাজী আনিসুর রহমানসহ বিপুল এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
গত সোমবার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আমলি আদালত ৪-এর বিচারক মো. জাহাঙ্গীর আলম পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য সোনিয়ার লাশ কবর থেকে উত্তোলনের জন্য নির্দেশ দেন।
পুলিশ জানায়, প্রথম দফায় আত্মহত্যা কি না, সে বিষয়ে ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল। ধর্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ে ময়নাতদন্তের জন্য পুনরায় সোনিয়ার লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। সে অনুযায়ী আদালত কবর থেকে লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহরাব হোসেন জানান, আদালতের নির্দেশে কবর থেকে সোনিয়ার লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্টসহ ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
তেঁতুলিয়া থানার ওসি সরেস চন্দ্র জানান, ধর্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ে ময়নাতদন্ত করার জন্য এবং কবর থেকে লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করি। আদালতের নির্দেশক্রমে লাশ উত্তোলন করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে গতকাল সোমবার আদালতে আবেদন করে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার শুনানি শেষে আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পঞ্চগড় আদালত পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সোনিয়ার স্বজনরা জানান, সোনিয়ার মা অসুস্থ হয়ে বাড়িতে ছিলেন। তিন মাস আগে তার মায়ের জন্য ওষুধ দেওয়ার কথা বলে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ডবয় মনসুর আলম রাজন তাকে বাংলালিংক কাস্টমার কেয়ারের কর্মকর্তা আতিকুর রহমান আতিকের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে রাজন ও পরে আতিক তাকে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করে। এরপর বিষয়টি কাউকে জানালে ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দেওয়াসহ হত্যার হুমকি দিয়ে তিন মাস ধরে ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করে আসছিল তারা। গত ৯ অক্টোবর ওই ছাত্রী বিষয়টি তার মা ও মামাকে জানায়। এ ঘটনার পর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওই ছাত্রীকে বিষয়টি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকে রাজন ও আতিক। একপর্যায়ে ওই ছাত্রী গত ১০ অক্টোবর আত্মহত্যা করে। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে পরের দিন ১১ অক্টোবর সোনিয়ার মরদেহ দাফন করা হয়।
পরিবারের অভিযোগ, সোনিয়ার আত্মহত্যার পর ১০ থেকে ১৩ অক্টোবর রাত পর্যন্ত তার মা সেলিনা আক্তার থানায় একাধিকবার মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। এ নিয়ে এলাকাবাসী বিক্ষোভ শুরু করে।
পরে গত ১৫ অক্টোবর সোনিয়ার মা সেলিনা আক্তার বাদী হয়ে আতিক ও রাজনের বিরুদ্ধে তেঁতুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯-এর ক ধারায় মামলা দায়ের করেন।