ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘একটু ধৈর্য ধরার আহ্বান করব সবাইকে। কারণ প্রথম দফাতেই যদি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু মানুষ আবার ফেরত চলে আসে তাহলে সেটা কিন্তু পুরো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে থমকে দেবে। আমরা সে ঝুঁকিটা নিতে চাই না।’
আজ সোমবার কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। দুপুরে উখিয়ার মধুরছড়ায় জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিনিধিদল ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটা অত্যন্ত জটিল। আমরা যে কারণে সময় নিচ্ছি সেটা হচ্ছে আমরা জাতিসংঘের রিফিউজি নিয়ে কাজ করেন বা এ রকম অবৈধ অভিবাসী নিয়ে কাজ করেন- ইউএনএইচসিআরকে সম্পৃক্ত করতে চাই; তাঁদের সঙ্গে চুক্তি আমাদের হয়ে গেছে, তাঁদের উপস্থিতিতে আমরা ফরমগুলো পূরণ করতে চাই। যেন কেউ না বলতে পারেন, কেউ তাঁদের জোর করছে বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে পাঠাচ্ছে। এটা করার জন্য একটু সময় লাগছে।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি যে নিরাপদ, তাঁরা ফিরে গিয়ে যে একই সমস্যায় পড়বেন না এটাও আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এ কারণে সময়টুকু লাগছে। একটু ধৈর্য ধরার আহ্বান করব সবাইকে। কারণ প্রথম দফাতেই যদি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু মানুষ আবার ফেরত চলে আসে তাহলে সেটা কিন্তু পুরো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে থমকে দেবে। আমরা সে ঝুঁকিটা নিতে চাই না।’
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলের প্রধান জিন লামবার্ট বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে নিজ ভূমিতে নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে ফিরে যেতে পারে সে প্রত্যাশা করে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট। রোহিঙ্গাদের অবশ্যই তাঁদের দেশ মিয়ানমারে মৌলিক ও নাগরিক অধিকার নিয়ে বসবাসের অধিকার রয়েছে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণ আশ্রয় নিয়ে উচ্চ মানবিকতা দেখিয়েছে। এটি নিশ্চয় প্রশংসার দাবিদার।’
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল সোমবার সকাল থেকে উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং ইউএনএইচসিআর, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাসহ (আইওএম) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এ সময় ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তারা ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিনিধিদল। এ সময় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইনের পরিস্থিতি তুলে ধরে।
প্রতিনিধিদলটি আজ কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে ঢাকায় ফিরে যাবে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি তাঁদের মিয়ানমার সফরের কথা আছে।
গত বছর আগস্টের শেষ দিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৯ লাখেরও বেশি।
গত ১৫ জানুয়ারি মিয়ানমারে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, গত ২৩ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। মিয়ানমারে এই চুক্তি সম্পাদনের পর থেকেই বাংলাদেশে সরকারিভাবে তোড়জোড় শুরু হয়ে পড়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে। তবে নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়নি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া।
এ প্রসঙ্গে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই কারিগরি (টেকনিক্যাল) কমিটির আহ্বায়ক এবং কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘আগামী মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) কোনোভাবেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। আমাদের এখনো অনেক কাজ বাকি আছে।’