কালিয়াকৈরে কাল আধাবেলা হরতালের ডাক যুবলীগের

গাজীপুরে যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলামের খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আগামীকাল রোববার কালিয়াকৈর উপজেলায় আধাবেলা হরতাল ডেকেছে উপজেলা যুবলীগ।
এ ছাড়া আজ শনিবার রফিকুলের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে দলের নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী। এ সময় তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে ওই মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আজ বিকেল পর্যন্ত দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল শুক্রবার কালিয়াকৈর পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিকেলে চন্দ্রা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজ মাঠে জাতীয় শোক দিবস ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠান শুরুর কিছু সময় পর বক্তব্য দেন কালিয়াকৈর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম। তিনি বক্তব্য শেষ করে অনুষ্ঠান চলা অবস্থায় মঞ্চ থেকে নেমে সভাস্থলের পশ্চিম পাশে একটি চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিলেন। এ সময় ১০-১২ যুবক লাঠি, রড ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে রফিকুলের ওপর হামলা চালায় এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়।
আশপাশের লোকজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা রফিকুলকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে রফিকুলের মৃত্যুর খবর পেয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বক্তব্য না দিয়েই অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে হাসপাতালে ছুটে যান।
শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে আজ শনিবার দুপুরে রফিকুল ইসলামের লাশ তাঁর নিজ বাসভবনে নিয়ে যাওয়ার সময় নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ তাঁদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে তারা লাশ নিয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
এ সময় নিহতের বড় ভাই মো. আবদুল মোতালেব বলেন, প্রকৃত খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করলে আন্দোলনের আরো বড় কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রাসেল, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মো. তোফাজ্জল হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. হিরু মিয়াসহ অন্য নেতারা বক্তব্য দেন। তাঁরা রফিকুলের খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এ সময় হিরু মিয়া খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আগামীকাল সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত কালিয়াকৈরে আধাবেলা হরতালের ঘোষণা দেন।
পরে স্থানীয় গোলাম নবী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে রফিকুল ইসলামকে উপজেলার চাপাইর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানাজায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী অংশ নেন। জানাজায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, খুনি যেই হোক তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওমর ফারুক জানান, খুনের ঘটনার পর ঘটনাস্থলে কালিয়াকৈর উপজেলার বাড়ইপাড়া এলাকার সুমন মিয়া নামের এক ব্যক্তির একটি ব্যক্তিগত গাড়ি পড়ে ছিল। ঘটনার দুই ঘণ্টা পর গাড়িটি নিতে এলে সুমন মিয়ার বোনের ছেলে মো. সোহেলকে আটক করে পুলিশ। সেই সঙ্গে গাড়িটিও জব্দ করা হয়।
এ ছাড়া খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মোহাম্মদ হোসেন নামের আরেক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। তবে আজ বিকেল পর্যন্ত এ বিষয়ে থানায় কোনো মামলা করা হয়নি বলেও জানান ওসি।