সাতক্ষীরায় ‘ভূমিহীন-দখলকারী’ সংঘর্ষে নিহত ২, আটক ৫

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার বৈরাগিরচক চিংড়াখালি এলাকায় ‘জমি দখলকারী ও ভূমিহীনদের’ সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ২০ জন। ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমাসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। জেলার কালীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মীর মনির হোসেন দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ২০ জন।
urgentPhoto
স্থানীয় বাসিন্দা ও কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মো. শহীদুল্লাহ জানিয়েছেন, সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিরা হলেন কাজলাকাশিবাটি গ্রামের আশরাফ মীর (৪৮) ও ইসহাক গাজী (৩৫)। আহত ব্যক্তিদের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় পুলিশ মনিরুল ইসলাম, সেকেন আলী, রেজাউল ইসলাম, নূর ইসলাম ও আবদুর রশিদকে আটক করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছে- এঁরা সবাই এলাকার ভূমিহীন। অন্যদিকে কালিগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মীর মনির হোসেন জানিয়েছেন, এ পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।
চিংড়াখালির ভূমিহীন নেতা রেজাউল, স্বপন, ছোট খোকন ও খায়রুলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৩ বছর ধরে সেখানকার খাসজমিতে ৩২০টি ভূমিহীন পরিবারের সহস্রাধিক সদস্য বসবাস করে আসছে। এখানকার ৮০০ বিঘা সরকারি খাস জমিতে বসবাস ও মাছ চাষ করছে তারা। সরকার তাদের উৎখাত না করে তাঁদের হাতে জমির দলিল তুলে দেবে এই অপেক্ষায় ছিল এসব মানুষ। তাঁরা জানান, এ খবর পেয়ে দুর্ধর্ষ ভূমিদস্যু আশরাফ মীর তাঁর লোকজনকে নিয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। তাঁরা আরো জানান, আশরাফ মীরের বিরুদ্ধে এখন ২৪টি মামলা রয়েছে। তিনি একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। ৫০-৬০ জনের বাহিনী নিয়ে তিনি এভাবেই জেলার বিভিন্ন স্থানে খাস জমি দখল পরিচালনা করে থাকেন। কিছুদিন ধরে আশরাফ মীর ও তাঁর ছেলে হোসেন মীর এ জমি দখল করে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
ভূমিহীন লোকজন ও পুলিশ জানায়, সোমবার ভোরে আশরাফ মীরের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন সশস্ত্র লোক বাড়িঘরে আকস্মিক হামলা চালায়। এ সময় পরপর কয়েকটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। আতঙ্কিত হয়ে লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। এ সময় আহত হন ভূমিহীন ফিরোজ, গফুর, মনিসহ বেশ কয়েকজন। এ ছাড়া আরো কয়েকজন নিখোঁজ হন। ভূমিহীনরা আরো জানায়, তারা আত্মরক্ষার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলে শেষ পর্যন্ত পাল্টা আক্রমণ করে। এ সময় দুই পক্ষে লেগে যায় সংঘর্ষ। ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা দিয়ে হামলাকারীদের প্রতিহত করতে নারী-পুরুষ সবাই ঘরের বাইরে চলে আসে ।
স্থানীয় লোকজন জানায়, কয়েকজন লোক আশরাফ মীর, তাঁর সহযোগী ইসহাক ও আবুবকরকে অস্ত্র ও বোমাসহ ধরে ফেলে। তাঁরা তাদের পিটুনি দিয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে কালীগঞ্জ হাসপাতালে নেওয়ার পর আশরাফ ও ইসহাকের মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর বৈরাগিরচক চিংড়াখালিতে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর মোদাচ্ছের হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত।
কালিগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মীর মনির হোসেন বলেন, আশরাফ মীরের নেতৃত্বে হামলাকারীরা প্রথমে বোমা ফাটায়। পরে তারা গুলিও ছোড়ে। এতে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা তিন হামলাকারী আশরাফ মীর, তাঁর শ্যালক ইসহাক গাজী ও সহযোগী আবুবকরকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। কালিগঞ্জ হাসপাতালে আনার পর পর আশরাফ ও ইসহাক মারা যান । ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান ও তিনটি তাজা বোমা ছাড়াও ধারালো অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে বলে মনির হোসেন জানান।
নিহত দুইজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় কালিগঞ্জ থানায় জোড়া খুনের মামলা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মীর মনির হোসেন।
এদিকে নিহত আশরাফ মীরের ছেলে ইসমাইল হোসেন জানান, বৈরাগিরচক চিংড়িখালিতে তাঁর বাবারও ঘরবাড়ি আছে। কিছুদিন আগে তাঁদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করে দেয় কিছু সন্ত্রাসী। তিনি বলেন, ‘সোমবার ভোরে আমার বাবাসহ অন্যরা সেখানে গেলে তাঁকে ও আমার মামা ইসহাককে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এই হত্যার নেতৃত্ব দেন কথিত ভূমিহীন আবুল হোসেন।’ ইসমাইল আরো জানান, এই আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে ভূমিহীন ছবিরন এবং ২০০৭ সালে ভূমিহীন কবির সানা হত্যার মামলা রয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলা হলো। ইসমাইল তাঁর বাবা ও মামা হত্যার বিচার দাবি করেন ।