মাদ্রাসা সুপারের মাথায় মল ঢেলে লাঞ্ছনা, তিনজন গ্রেপ্তার

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় মাদ্রাসার জমি ও কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে মাদ্রাসা সুপারকে প্রকাশ্যে মারধর ও মাথায় মল ঢেলে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন হলেন মিরাজ হোসেন সোহাগ, মিঞ্জু হাওলাদার ও বেলাল হোসেন।
আজ সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরিশালের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম।
পুলিশ সুপার জানান, মিরাজকে আটকের আগে ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামের মিঞ্জু হাওলাদার (৪৫) ও বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বেল্লালকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়।
সাইফুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসা সুপারের মাথায় ও শরীরে মানুষের মল ঢেলে দিয়ে লাঞ্ছনার এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক। খবরটি জানতে পারার পর থেকেই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সেই ভিডিওচিত্রের বাইরেও অনেকে এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। তাদের বিষয়ে আমরা তথ্য পাচ্ছি, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
পুলিশ সুপার বলেন, মাদ্রাসা সুপারকে লাঞ্ছনা করেই চক্রটি ক্ষ্যান্ত হয়নি, তারা সেই লাঞ্ছনার ভিডিওধারণ করে আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছে। আর এটাই তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। ভিডিওটা না হলে হয়তো লাঞ্ছনা করার ঘটনা তেমন কেউই জানতে পারত না। কারণ মাদ্রাসা সুপার ও তাঁর পরিবার বিষয়টি লোকলজ্জায় গোপন রাখতে চেয়েছিলেন।
‘পুরো ঘটনার সাথে ১০ থেকে ১২ জনের সম্পৃক্ততা থাকার খবর এই পর্যন্ত আমাদের কাছে রয়েছে। পাশাপাশি পেছনে থেকেও অনেকে কলকাঠি নেড়েছেন। সবই তদন্তে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।’ বলে মন্তব্য করেন পুলিশ সুপার।
বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নে গত শুক্রবার সকালে লাঞ্ছনার এই ঘটনা ঘটে। রোববার ঘটনার ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। ঘটনার শিকার কাঁঠালিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. আবু হানিফ বাদী হয়ে আটজনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
আবু হানিফ বলেন, ‘১১ (মে) তারিখ সকালে ফজরের নামাজ পড়ে ৭টার দিকে হাঁটতে বের হয়েছিলাম। তখন জাহাঙ্গীর মৃধা ও মাসুম সরদারের নেতৃত্বে অনেকে মিলে আমাকে রাস্তায় আটক করে লাঞ্ছিত করে। সামাজিকভাবে আমাকে অসম্মানিত করার জন্য ওরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, আবু হানিফ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। কয়েকজন তাঁর পথ রোধ করে। এরপর একজন তাঁর মাথার টুপি ও কাঁধের রুমাল খুলে নেয়। তখন আবু হানিফ তাঁর মোবাইল ফোন বের করলে একজন এসে ফোনটি কেড়ে নেয়। অন্য আরেকজন তাঁর হাত চেপে ধরে রাখে। তারপর পলিথিনে পেঁচানো একটা হাঁড়ি বের করে সেখান থেকে মলমূত্র ঢেলে দেয় হানিফের মাথায়। এ সময় তাঁকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, ‘এইয়া নিয়া যদি বাড়াবাড়ি করো তাহলে তোর জীবন শেষ হইয়া যাইবে।’ এরপর তাঁকে গালাগালি করে স্থান ত্যাগ করতে বলা হয়।’
আবু হানিফ বলেন, তারা মাদ্রাসার জমি দখল করার চেষ্টা করছিল। এই চক্রটি নানাভাবে বিনা অনুমতিতে মাদ্রাসার জমিতে বিভিন্ন কার্যক্রম করে আসছিল। আমি এতে বাধা দিই। এ নিয়ে মামলাও চলছে। আমি মামলার বাদী। এ কারণে ওরা আমার ওপর ক্ষিপ্ত। সেই সাথে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদেও এই দলের লোক জাহাঙ্গীর জায়গা পায়নি। সভাপতি হয়েছেন এখানকার সংসদ সদস্যের মনোনীত ব্যক্তি। এসব করণে ওরা ক্ষেপে আমাকে নির্যাতন করেছে।
এদিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব পটুয়াখালী-১ আসনের সাংসদ এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বরিশাল-৬ আসনের সাংসদ নাসরিন জাহান রত্না এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীর খন্দকার একসময় জাতীয় পার্টি করতেন। এখন সে আওয়ামী লীগে। তাঁর সঙ্গে জাতীয় পার্টির কোনো সম্পর্ক নেই।
জাতীয় পার্টির এই দুই কেন্দ্রীয় নেতা মাদ্রাসা সুপারকে লাঞ্ছনাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।