মেহেরপুরের ছেলে লিবিয়ায় অপহৃত

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি আর কটা দিন পর দেশে ফিরবে। তাই আনন্দের বন্যা বইছিল মেহেরপুরের সদর উপজেলার রাইপুর গ্রামের লিবিয়াপ্রবাসী আবদুল মান্নানের (৪৫) বাড়িতে। পরিবারের সদস্যরা দিন গুনছিল তাঁর বাড়ি ফেরার দিনটির জন্য। কিন্তু অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। বেঁচে আছে না মরে গেছে সেটাও জানে না তাঁর পরিবার।
নিখোঁজের ছয়দিন পরও আবদুল মান্নানের কোনো সন্ধান মেলেনি। পরিবারে চলছে কান্নার মাতম।
এদিকে লিবিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, দেশটিতে গৃহযুদ্ধের ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দিন কাটছে চরম আতঙ্কের মধ্যে। দেশে টাকা পাঠানোর নানা সমস্যা এবং কাজ করে পারিশ্রমিক না পাওয়ার নিদারুণ কষ্টও রয়েছে তাঁদের মধ্যে।
মান্নানের স্ত্রী নাজেরা খাতুন জানান, আর্থিক সচ্ছলতার আশায় লিবিয়ায় পাড়ি জমান তাঁর স্বামী। বাড়িতে থাকতে তিনি মেশিনারিজ মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। লিবিয়ায় গিয়ে বেরাকুলি শহরে টাইলস মিস্ত্রির কাজ করতেন। দীর্ঘ দুই বছর আট মাস পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু গত ১৯ আগস্ট সকালে তাঁর স্বামী আবদুল মান্নান ও সহকর্মীরা কাজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ একটি গাড়ি বাড়ির সামনে গিয়ে হর্ন বাজায়। গেট খুলতেই অস্ত্র দেখিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে তাদের। এতে গুরুতর আহত হয় মেহেরপুরের লিটন ও রংপুর জেলার খাইরুজ্জামান। লিটনের বাড়িও রাইপুর গ্রামে। তাঁদের দুজনকে কম্বলে জড়িয়ে ফেলে রেখে অপহরণ করে নিয়ে যায় মান্নানকে। সেখান থেকে তাঁদের জমিয়ে রাখা টাকা ও ১২টি মুঠোফোন নিয়ে যায় অস্ত্রধারীরা। তার পর থেকেই তাঁর আর কোনো খোঁজ মিলছে না। পরদিন দুপুরে আহত লিটন মোবাইল ফোনে মান্নানের বাড়িতে বিষয়টি জানান। এ সংবাদ শোনার পর থেকেই তাঁর পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
এদিকে মান্নানকে জীবিত ফিরে পেতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর একটি আবেদনও করেছেন তাঁর স্ত্রী নাজেরা খাতুন।
মান্নানের ছেলে মইনুদ্দীন (১৫) জানায়, কে বা কারা তার বাবাকে অপহরণ করেছে, কিছুই জানে না তারা। তার বাবাকে উদ্ধারের জন্য সরকার এগিয়ে আসবে এমনটিই আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সে।
লিটন মোবাইল ফোনে জানান, দেশ অস্থিতিশীল থাকার কারণে তাঁরা বাড়িতে কোনো টাকা পাঠাতে পারছেন না। ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে গেলে মোটা অঙ্কের বাড়তি টাকা খরচ করতে হয় তাদের। ফলে অনেক সময় তাঁদের কাছেই উপার্জিত টাকা জমা রাখতে হয়। এ কারণে প্রায়ই হামলার শিকার হতে হয় তাঁদের। কাজ ছাড়া বাইরে বের হতে পারেন না। আবার কাজ করে টাকা চাইতে গেলে অস্ত্র তাক করে ভয় দেখানো হয়। এসব সমস্যার কথা দূতাবাসে জানালেও বরাবরই মিলছে আশ্বাসের বাণী। আবদুল মান্নানের নিখোঁজের বিষয়টি দূতাবাসে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
মেহেরপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক খাইরুল হাসান জানান, আবেদনটি দ্রুত প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। দূতাবাসের মাধ্যমে তাঁকে খুঁজে বের করে দেশে ফিরিয়ে আনার আশ্বাসও দেন তিনি।