নৌকা দেখলেই ত্রাণের জন্য ছুটছে মানুষ
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/09/07/photo-1441628636.jpg)
কুড়িগ্রামের নয়টি উপজেলার ৬৮ ইউনিয়নের ছয় লাখেরও বেশি মানুষ ১৮ দিন ধরে পানিবন্দি। অধিকাংশ মানুষ গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাঁধের ওপর। দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট। নৌকা দেখলেই ত্রাণের জন্য ছুটে যাচ্ছে মানুষ।
urgentPhoto
ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সবকিছু তলিয়ে যাওয়ায় বানভাসি মানুষজন নৌকা, বাঁশের মাচা ও ঘরের চালে আশ্রয় নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৪০ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’
সরকারিভাবে আশ্রয় কেন্দ্র না খোলায় গবাদি পশুসহ বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে বানভাসি মানুষ। বন্যাকবলিত এলাকায় নৌকা দেখলেই ত্রাণের জন্য ছুটে যাচ্ছে মানুষজন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরপার্বতীপুর গ্রামের বাসিন্দা নছিমন খাতুন বলেন, ‘পানি বেশি। টংয়ের ওপর কোনো রকমে আশ্রয় নিয়েছি। জোটপাড় না পাই, খাই কি। যদি চাল ১-২ সের দেয়, নিয়া যায়া ভাজি খায়া পানি খান। তা চরবার পাই না। এত পানি কটাই চরাই। যার নৌকা আছে তাইতো নৌকায়, আর যার নাই তাই টংপাতি কোনো রকম জান বাঁচই পারছে। নৌকা দেখি আসলোং সাহায্য পামো। আসি দেখি নাই।’
সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার চর খেয়ার আলগার আছমা খাতুন বলেন, ‘বন্যার মধ্যে বাচ্চা-কোচ্চা নিয়া সোয়ার জায়গা নাই। খাওয়া-দাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নাই। কারো খাবার বাড়িত নাই। সবাইরে বিধিকিস্তির অবস্থা দাঁড়াইছে।’
সদর উপজেলার ভগবতীপুর চরের আবুল বলেন, ‘আজকে ১২-১৩ দিন থেকে ঘরে পানি ঢুকছে। ঘরের চৌকি পর্যন্ত তলে গেছে। মাচা পাতি আছি। কোন রকমে মাচার ওপর রান্না করে জীবন বাঁচাচ্ছি। মেম্বর-চেয়ারম্যান কেউ খোঁজ নেয় না। কী খাই না খাই, কাজকর্ম তো নাই কোথাও। খুব বিপদে আছি।’
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল গফুর বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ছয় হাজার মানুষ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি। প্রথমে তিন টন ও পরে চার টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। যা বিতরণ করা হয়েছে। সবাইকে ত্রাণের চাল দেওয়া সম্ভব হয় নাই।’
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘বন্যার্তদের জন্য এ পর্যন্ত ৪০০ টন চাল ও ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২৫০ টন চাল ও সাড়ে ছয় লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।’
বন্যার পানির প্রবল স্রোতে রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের নটানপাড়া এলাকার তুড়া সড়ক ও বন্দবের ইউনিয়নের খঞ্জনমারা গ্রামের রৌমারী-দাঁতভাঙ্গা সড়ক ভেঙে নতুন করে ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে।