সিরাজগঞ্জে বন্যার পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি

সিরাজগঞ্জে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। ঈদুল আজহার আগে দীর্ঘস্থায়ী এ বন্যায় বানভাসি মানুষদের দুর্ভোগ এখন চরমে।
প্রথম দফায় প্রায় দুই সপ্তাহ পানিবন্দি ছিল এ অঞ্চলের মানুষ। বন্যার পানি নামতে শুরু করলে তারা যখন নিজ ঘরে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখনই আবার দ্বিতীয় দফায় বাড়তে শুরু করে পানি। ফলে দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায় এ অঞ্চলের মানুষের।
দ্বিতীয় দফার এ বন্যায় ফের জেলায় অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বন্যার কারণে জেলার ৪৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা অধিদপ্তর।
এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে থাকা লতাগুল্ম, ময়লা আবর্জনা, খড়কুটো আর গাছের পাতা পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে দূষিত পানির কারণে বন্যার্তদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা পানিবাহিত রোগ। এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে এসব এলাকায়।
বন্যার পানিতে কাজিপুরের চরাঞ্চলের অনেক আধাপাকা ধানক্ষেত তলিয়ে গেছে। দীর্ঘদিন পানিতে ডুবে থাকায় চরাঞ্চলের কলাক্ষেতে দেখা দিয়েছে মড়ক।
চরগিরিশ গ্রামের কলাচাষি আলম মিয়া জানান, পানিতে ডুবে থাকায় কলাগাছের চারা হলুদ হয়ে মরে ভেসে উঠছে। এ বছর তাঁর তিনবিঘা জমির কলাগাছ পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে যমুনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবার নতুন করে ইছামতি নদীর তীর উপচে সোনামুখী, পাইকপাড়া, ভানুডাঙ্গা, চরকাদহ, হরিনাথপুরের বিস্তীর্ণ রোপা আমন ধানক্ষেত ও সবজি ক্ষেতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর আলী শেখ জানান, এবারের বন্যায় জেলার ৫৩৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব জমিতে রোপা আমন, মাষকলাই, মৌসুমি সবজি, কলাসহ নানা রকমের ফসলের চাষ করেছিল কৃষকরা।
চৌহালীর চরের রফিক মোল্লা জানান, এবারের কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য কয়েকটি গরু তিনি পালন করছিলেন। কিন্তু আকস্মিক বন্যায় গবাদি পশুর জন্য কোনো খাবার সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি। ফলে পশুগুলো নিয়ে বিপদের মুখে আছেন এ ব্যবসায়ী। চরাঞ্চলগুলোতে চলছে কাঁচা ঘাসের সংকট। এভাবে আর কিছুদিন চললে গবাদি পশুগুলো নিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কায় তাঁরা।
শাহজাদপুর উপজেলার রেশমবাড়ী প্রাথমিক দুগ্ধ সমবায় সমিতির সদস্য সামাদ ফকির জানান, গোচারণ ভূমি ডুবে যাওয়ায় তার মতো শত শত খামারি প্রায় দুই লক্ষাধিক গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। খবার সংকটের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে গবাদি পশুর আবাসন সংকট। সাধারণত তাঁরা দুধ উৎপাদনের জন্য গরু পালন করে থাকলেও এ বছর কোরবানির গরুর ব্যবসা ভালো হওয়ার আশায় অনেকেই ষাড় গরু পালন করছেন। কিন্তু বন্যায় গোচারণ ভূমি ডুবে যাওয়ায় এসব খামারির দুর্ভোগের অন্ত নেই। এমন কি অনেকে বন্যার কারণে গরু নিয়ে হাটে যেতেও সমস্যার মুখে পড়ছেন।
অপরদিকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি, সয়দাবাদ, বেলকুচি উপজেলার রান্ধুনীবাড়ি, আগুরিয়া, শাহপুর, আজুগড়া, এনায়েতপুর থানার গোপীনাথপুর, কৈজুরী, সৈয়দপুর প্রভৃতি গ্রামের নিম্নাঞ্চলের তাঁত কারখানায় পানি প্রবেশ করায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়েছে।
তাঁত শ্রমিক রুবেল জানান, প্রতি বছর ঈদের সময় উৎপাদন বেশি হওয়ায় তাঁদের মুজুরিও বাড়ে। ঈদের সময় এই বাড়তি মুজুরি দিয়েই ছেলেমেয়েদের ইচ্ছে পূরণসহ ঈদের খরচ চালায়। কিন্তু এ বছর বন্যার পানি প্রবেশ করায় কারখানা বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত মুজুরি তো দূরের কথা এখন তাঁদের সংসার চালানোই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।