মোংলা বন্দরের ৩১২ জনকে দুদকে তলব

জাল সার্টিফিকেট, কোটা ও বয়সসীমা জালিয়াতি করে মোংলা বন্দরে চাকরি নেওয়ায় কয়েকশ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তলব করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কীভাবে তারা অনিয়ম করে চাকরি নিয়েছেন, সে ব্যাপারে দুদক তদন্ত নেমেছে বলেও জানা গেছে।
এদিকে, এ ঘটনায় বন্দরের অফিসপাড়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অর্থ-বাণিজ্যের মাধ্যমে অনিয়ম করে বন্দরের বিভিন্ন কর্মস্থলে কয়েকশ লোককে চাকরি পাইয়ে দেয় বন্দরের কর্মচারীদের সংগঠন (সিবিএ)। বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন কর্মস্থলে নিয়োগের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে সিবিএ হস্তক্ষেপ করায় এসব অনিয়ম হয়ে আসছে বলে জানান চাকরিপ্রত্যাশীদের অভিভাবকরা।
মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ী ও একজন চাকরিপ্রত্যাশীর অভিভাবক শাজাহান সিদ্দিকী বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে মোংলা বন্দরে যেভাবে নিয়োগ-বাণিজ্য চলছে, তাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা ভালো ফল করেও চাকরি পাবে না।’ তিনি আরো বলেন, বন্দরের সিবিএর নেতাদের কাছে জাল সার্টিফিকেট, বয়স নেই, কাজের অভিজ্ঞতা নেই এমন জাল সনদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে গেলেই অনভিজ্ঞদের চাকরি হয়ে যায়। এতে কোনোদিন মেধাবীদের চাকরি হবে না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন শাজাহানসহ স্থানীয় আরো বেশ কয়েকজন অভিভাবক।
এদিকে, জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি নেওয়া মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব জলযান এমটি সারথী-২-এর ভাণ্ডারি (রাঁধুনী) ফজলুল হক, এমটি মেঘদূতের হাবিবুর রহমান এবং সারোয়ার মুন্সি বলেন, এ ব্যাপারে তাঁদের সিবিএর নেতা পল্টু ও সাকিবকে জিজ্ঞাসা করেন। তাঁরাই তাঁদের হয়ে কথা বলবেন। তাঁরা কিছুই বলতে পারবেন না। সারোয়ার মুন্সি মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্মচারী সংঘের যুগ্ম সম্পাদক মতিউর রহমান সাকিবের বোনজামাই (ভগ্নিপতি)। সাকিবের ছোট ভাই মহসিন হোসেন বাদশাও জন্মসনদ জাল করে বয়স কমিয়ে সিনিয়র আউটডোর অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে চাকরি নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দরের হারবার, মেরিন এবং যান্ত্রিক ও তড়িৎ বিভাগের একাধিক কর্মচারী জানান, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্মচারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম পল্টু ও যুগ্ম সম্পাদক মতিউর রহমান সাকিব বন্দরের কর্মচারীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেই তাঁদের কর্মস্থলের চাকরি ফেলে বেসামাল হয়ে ওঠেন। তাঁরা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির তালিকা ধরে নিয়োগ-বাণিজ্যে নেমে পড়েন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
তবে পল্টু ও সাকিব এ অভিযোগ হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভুয়া। তাঁরা বন্দরের নিয়োগ কমিটিকে স্বাভাবিক কাজ করতে আরো সহযোগিতা করেন বলে দাবি করেন। তাঁরা আরো বলেন, বন্দরে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, দুদক তাঁদের ডেকে হয়রানি করছে। তিন-চার বছর ধরে চাকরিতে আসীন অবস্থায় তাঁদের ডেকে আবার লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার যৌক্তিকতা নেই বলেও দাবি করেন তাঁরা।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অনিয়ম করে চাকরি পাওয়ায় বন্দরের ৩২ কর্মচারীকে দুদক ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
এ প্রসঙ্গে খুলনার দুর্নীতি দমন কমিশনের ডিডি নীল কমল পাল বলেন, জাল সার্টিফিকেট, কোটা ও বয়সসীমা জালিয়াতি করে যাঁরা মোংলা বন্দরে চাকরিতে নিয়োগ নিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে তাঁদের ডাকা হচ্ছে। দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা ফয়সাল কাদের এ বিষয়ে তদন্ত করছেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেই সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার (মামলা) দায়ের করা হবে বলেও দুদক কর্মকর্তা নীল কমল পাল জানান।
এদিকে, বন্দরের পার্সোনাল শাখার একটি সূত্র জানায়, গত ২০১৩ ও ২০১৪ সালে নিয়োগ পাওয়া ৩১২ জন কর্মচারীর অধিকাংশের বিরুদ্ধেই অযোগ্যতার অভিযোগ ওঠায় চলতি বছরের জুলাই মাসে দুদফায় ২৮ জনকে তলব করে পুনরায় পরীক্ষা নিয়েছে দুদক।
সূত্রটি আরো জানায়, বন্দরের নিজস্ব জলযান এমএল গাংচিল, এমটি শিবসা, এ টি সারথী-২, বিএলভি মালঞ্চ, এমএল ঝিনুক, এমএল উষা, এমটি সারথী-১, এমভি রুহী, এমএল রাজহংস, এমভি তৃষ্ণা, এফএফটি অগ্নি প্রহরী, এমএল ময়ীরপঙ্খী, এমএল বলাকা, এমএল পান্না, এমএল হীরা, এমএল মতি, এমএল অনুসন্ধানী, এমএল উর্মি ও এমএল মুক্তার ‘ভান্ডারি’ (রাঁধুনী) ছাড়াও যান্ত্রিক ও তড়িৎ বিভাগের ‘ক্রেন হেলপার’ পদের নব্বই শতাংশ কর্মচারীই জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন।