নাম ঠিকানায় মিল নেই, তবু গ্রেপ্তার

আসামির নাম মো. হাফিজুর রহমান। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুযায়ী সাতক্ষীরা পৌরসভার কাটিয়া এলাকার মো. মোকছেদ আলীর ছেলে তিনি। তবে ওই নামে সেখানে কেউ নেই। সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ তাঁকে না পেয়ে গ্রেপ্তার করেছে পাশের লস্করপাড়া মহল্লার মো. হাফিজুল ইসলামকে। তাঁর বাবার নাম মো. মকছেদ কাগুচি।
গত ৮ সেপ্টেম্বর হাফিজুলকে গ্রেপ্তার করা হয় চার বছর আগে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে করা চেক প্রতারণার একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বলে।
হাফিজুলের পরিবারের দাবি, দরিদ্র কাঠমিস্ত্রি হাফিজুল লেখাপড়া জানেন না। তিনি কখনং ঢাকায় যাননি। ঢাকার ব্যাংকে তাঁর কোনো হিসাবও নেই। চার-পাঁচ মাস আগে সাতক্ষীরার ইসলামী ব্যাংকের শাখায় একটি হিসাব খোলেন। অথচ ঢাকার কারওয়ানবাজার শাখা এবি ব্যাংকের দেওয়া চার লাখ টাকার চেক প্রতারণার মামলায় হাফিজুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হাফিজুল ইসলামের স্ত্রী সানজুয়ারা খাতুন ও তাঁর ভাই মতিয়ার রহমান এনটিভি অনলাইনকে জানান, ঢাকার সিএমএম আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যার নামে ইস্যু করা হয়েছে তাঁর নাম মো. হাফিজুর রহমান, পিতা মো. মোকছেদ আলী, কাটিয়া, সাতক্ষীরা। বর্তমানে বাড়ি নম্বর ১৪৯, রোড নম্বর ৬, চতুর্থতলা, থানা : মোহাম্মদপুর, মোহাম্মদপুর হাউজিং লিমিটেড, ঢাকা। অপরদিকে পুলিশ যাকে গ্রেপ্তার করেছে তাঁর নাম মো. হাফিজুল ইসলাম, পিতা মো. মকছেদ কাগুচি, লস্করপাড়া, সাতক্ষীরা।সানজুয়ারা খাতুন ও তাঁর ভাই মতিয়ার রহমান অভিযোগ করে বলেন, ৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তারের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে বলা হয়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার নামের সঙ্গে হাফিজুলের নাম ঠিকানার মিল নেই। তা সত্ত্বেও পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তাঁকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া সিএমএম কোর্টে মামলার আরজিতে বাদী ঢাকার ওয়ারীর ৩ নম্বর ওয়ারী স্ট্রিটের বাসিন্দা আশফাকুর রহমান চৌধুরী সিআর মামলা ৫৬৫/২০১১ এ উল্লেখ করেন যে, বিবাদী তাঁকে পাওনা বাবদ চার লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি এবি ব্যাংক, কারওয়ানবাজার শাখা, ঢাকা কর্তৃক ইস্যুকৃত। তারিখ ২৮.০৪.২০১১। তিনি জানান, চেকটি নগদায়নের জন্য তিনি তাঁর হিসাব নম্বর ১১৩ এর অনুকুলে প্রিমিয়ার ব্যাংক নবাবপুর শাখায় ০৬.০৭.১১ তারিখে জমা দেন। কিন্তু অপর্যাপ্ত তহবিল মন্তব্য সহকারে চেকটি ফেরত আসে। এর পরও টাকা পরিশোধ না হওয়ায় তিনি হাফিজুরকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। তাও ফেরত আসে। এরপর আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলার বিবাদী মো. হাফিজুর রহমান গ্রেপ্তারে ২০১১ সালের ২১ আগস্ট পরোয়ানা জারি করা হয়। তখন থেকে এটি পড়ে ছিল। সম্প্রতি সেটি তামিল করতে গিয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ বিবাদী কাটিয়ার হাফিজুর রহমানকে না পেয়ে লস্করপাড়ার কাঠমিস্ত্রী হাফিজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে সাতক্ষীরা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন কাটিয়া মহল্লায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সেখানে মো. মোকছেদ আলী ও তাঁর ছেলের নাম মো. হাফিজুর রহমান- এমন কেউ নেই।
এ ব্যাপারে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক পৌর কমিশনার আবদুস সেলিম এনটিভি অনলাইনকে জানান, হাফিজুর রহমান নামে তাঁদের এলাকায় কেউ থাকতে পারে। তবে মো. মোকছেদ আলীর ছেলে মো. হাফিজুর রহমান এমন নামে কেউ নেই।
এদিকে হাফিজুলের স্ত্রী সানজুয়ারা খাতুন গত শনিবার সাতক্ষীরায় এক সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর স্বামীর মুক্তি দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদ শেখ জানান, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা (হাফিজুলের পরিবার) তাঁর কাছে আবেদন জানালে তিনি বিষয়টি আদালতে প্রতিবেদন আকারে দাখিল করবেন। এ ব্যাপারে পুলিশের কোনো ক্রটি থাকলে তাও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।