এমপির কাছে ঘুষের টাকা ফেরত চান চাকরিপ্রার্থীরা!

ঘুষ নিয়ে চাকরি না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারার বিরুদ্ধে।
গতকাল শুক্রবার ঘুষের টাকা ফেরত চেয়ে দারার রাস্তা আটকাতে এই অভিযোগকারীরা প্রায় আড়াই ঘণ্টা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছিল।
উপজেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক আবুল ফজল প্রামাণিক জানান, গত বৃহস্পতিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, এলাকায় আসবেন কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা। এই স্ট্যাটাসের ভিত্তিতেই গতকাল রাস্তায় অবস্থান নেয় চাকরিপ্রার্থীরা।
চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, চাকরির জন্য তারা এমপি দারাকে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়েছে। কিন্তু তিনি তাদের চাকরি দেননি, টাকাও ফেরত দেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল সকাল ১০টার দিকে পুঠিয়া উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক যুবক রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের ঝলমলিয়া এলাকায় অবস্থান নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ আবদুল ওয়াদুদ দারার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এ সময় তারা এমপির বিরুদ্ধে নানা স্লোগানও দেয়।
পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুঠিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার রহিম কনক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক আবুল ফজল প্রামাণিকসহ স্থানীয় নেতারা গিয়ে তাদের অনুরোধ করে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেন।
মনোনয়ন না পেয়ে রাজশাহীতে কর্মীদের সামনে কেঁদেছিলেন কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা। ছবি : পুরোনো ছবি
এ সময় আবুল ফজল প্রামাণিক চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘২০০৯ সালে আমি নিজেই সহকারী শিক্ষক পদে আমার ভাইয়ের চাকরির জন্য এমপিকে দুই লাখ টাকা দিয়েছিলাম। এমপি আমার ভাইকে চাকরি দেননি। টাকাও ফেরত দেননি। আমি নিজেই ভুক্তভোগী। নির্বাচনের পর আমরা আবদুল ওয়াদুদ দারাকে যেখানে পাব, সেখানেই সবার টাকা আদায় করব।’
আবুল ফজল সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘চাকরিপ্রার্থীরা রাস্তায় অবস্থান নিলে আমাকে থানা থেকে ফোন করা হয়। থানা থেকে আমাকে বলা হয়, সামনে নির্বাচন, এতে আপনাদের দলের ক্ষতি হবে। বিক্ষুব্ধদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেন। তাই আমরা গিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেই। তাদের আশ্বাস দিয়েছি, ৩০ ডিসেম্বরের পর আবদুল ওয়াদুদ দারাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই তাঁর কাছ থেকে টাকা আদায় করা হবে।’
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি নির্বাচিত হন ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ দারা। দশম সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন। তবে এবার রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে শুধু পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনেই পরিবর্তন আনে আওয়ামী লীগ। দারাকে না দিয়ে এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মুনসুর রহমানকে।
এ বিষয়ে পুঠিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মহিনুল ইসলাম বলেন, ‘টাকা দিয়ে চাকরি পায়নি এমন কিছু লোক রাস্তা অবরোধ করেছিল। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়। পরে বিকেলে এমপি দারা নিজ এলাকায় ফিরেছেন।’
এ বিষয়ে কয়েক দফা এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর বন্ধ পাওয়া যায়। এসএমএস দিয়েও সাড়া না পাওয়ায় এসব অভিযোগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।