অরিত্রীর আত্মহত্যা : হৃদয়বিদারক বললেন হাইকোর্ট

মা-বাবাকে অপমান এবং স্কুল থেকে বের করে (টিসি) দেওয়ার হুমকি দেওয়ায় রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর (১৫) আত্মহত্যার ঘটনাকে হৃদয়বিদারক ও বাজে রকমের দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আইনজীবী ব্যারিস্টার সাইয়েদুল হক সুমন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত অরিত্রী অধিকারীর (১৫) আত্মহত্যার প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা প্রার্থনা করছি।’
তখন আদালত বলেন, অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনা খুবই হৃদয়বিদারক। এ সময় শিক্ষার্থীর সামনে মা-বাবাকে অপমানের ঘটনাকে বাজে রকমের দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেন আদালত।
আদালত আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট নিয়ে আসেন। আমরা আগামীকাল এ বিষয়ে শুনানি করে বিষয়টি দেখব।’
নিহতের বাবা দিলীপ অধিকারী জানান, তাঁর বড় মেয়ে অরিত্রীর বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রোববার পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল অরিত্রী। সেখানে তার কাছে মোবাইল ফোন পান শিক্ষিকা। শিক্ষিকা অভিযোগ করেছেন যে অরিত্রী নকল করেছে। ওই সময় শিক্ষিকা মোবাইল সেট রেখে দেন। এবং তার বাবা-মাকে বিদ্যালয়ে যেতে বলেন। পরে গতকাল সোমবার তাঁরা মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যান।
দিলীপ অধিকারী বলেন, ‘আমরা ভাইস প্রিন্সিপাল ও প্রিন্সিপালের রুমে গিয়ে তাঁদের ওই অভিযোগ শুনি। জোর হাত করে ক্ষমা চাই। মেয়েও পায়ে ধরে ক্ষমা চায়। কিন্তু তাঁরা কোনো কিছুই শুনতে না চেয়ে বের হয়ে যেতে বলেন। বলেন, বের হয়ে যান, কাল এসে টিসি নিয়ে যাবেন। এ সময় দ্রুত বাসায় চলে যায় অরিত্রী। পেছনে পেছনে আমরাও যাই। বাসায় গিয়ে দেখি সে নিজের ঘরে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছে। পরে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে এবং সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিকেল সাড়ে ৪টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
অরিত্রী অধিকারী ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রভাতি শাখার ইংরেজি মাধ্যমে নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তাদের বাসা শান্তিনগরে।
অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারীর গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলায়। তিনি কাস্টমসের সিঅ্যান্ডএফের ব্যবসা করেন। তাঁর ছোট মেয়েও ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থী।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাঁদতে কাঁদতে দিলীপ অধিকারী বলেন, ‘অরিত্রীকে টিসি না দিতে আমি এবং তার মা স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম; কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। অরিত্রীকে আরেকবার সুযোগ দিলে হয়তো আমার মেয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেত না।’