ময়মনসিংহের এমপি ছেলেসহ গ্রেপ্তার

১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সংসদ সদস্য এম এ হান্নানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানের নিজ বাসভবন থেকে ছেলে সাজ্জাদসহ সংসদ সদস্য হান্নানকে আটক করে বনানী পুলিশ। এম এ হান্নান জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দুপুরে গুলশানের বাসা থেকে এমপি হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সঙ্গে তাঁর ছেলেকেও আটক করা হয়েছে। দুজনকেই পরে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল হান্নান এনটিভি অনলাইনকে জানান, প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ দুপুর আড়াইটায় সংসদ সদস্য হান্নানসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল। এর পর ঢাকা থেকে এমপি হান্নান ও তাঁর ছেলেকে এবং ময়মনসিংহ থেকে আরো তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, ত্রিশাল উপজেলার বৈলর এলাকা থেকে হরমুজ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অপরদিকে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, শহরের নওমহল এলাকার বাসা থেকে মিজানুর রহমান এবং কলেজ রোড মোড় থেকে গোলাম সাব্বির আহমদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সাব্বির আহমদ জামায়াতে ইসলামীর নেতা এবং মিজানুর রহমান দাবি করেছেন তিনি জেলা জাতীয় পার্টির(এরশাদ) সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।
প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক, বিচারপতি শাহিনূর ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ারদী এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা-ধর্ষণ-লুটপাটসহ চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগ নিয়ে আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল আজ তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।’
গত ১৯ মে মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে হত্যার অভিযোগ এনে এম এ হান্নানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের একটি আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুর রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন (৭০) বাদী হয়ে ময়মনসিংহের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। বিচারক আহসান হাবীব বাদীর জবানবন্দি শেষে মামলাটির পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেন।
ওই মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন পীযূষ কান্তি সরকার ও মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট বিকেলে ত্রিশাল উপজেলার বৈলর মুন্সীপাড়ার ওসমান আলীর ছেলে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুর রহমানকে এম এ হান্নান ও তাঁর সহযোগীরা পাশের গৌরীপুর থানার ভাংনামারীর চর থেকে ধরে আনেন। পরে ময়মনসিংহের নতুন বাজারে তাঁর বাসার টর্চার সেলে আবদুর রহমানের চোখ উপড়ে ফেলে, হাত ভেঙে দিয়ে হান্নান নিজে গুলি করে হত্যা করেন। হত্যার পর তাঁর বাড়িতে গিয়ে লুটপাট-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এজাহারে আরো বলা হয়, ‘এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শহরতলির মাইজবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আতাউর রহমান আতা, কাঁচিঝুলি এলাকার টেপা মিয়ার ছেলে দারা, চরপাড়ার আবদুল খালেকের ছেলে রমজান, একই এলাকার নিজাম, আকুয়া হাজিবাড়ির সুরুজ, খন্দকার আবদুল আলী রতনকে গুলি করে হত্যা করে ব্রহ্মপুত্র নদে লাশ ফেলে দেন আসামিরা।’
আসামিরা রাজাকার বাহিনীর সহায়তায় ময়মনসিংহ অঞ্চলে ব্যাপক গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নি-সংযোগসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান বলেও মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।