মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হল মুজাহিদকে
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় কার্যকর করতে পাঠানো মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়েছে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে। আর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পড়ে শোনানোর জন্য পরোয়ানা কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।urgentPhoto
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির এনটিভিকে জানান, বিকেল পাঁচটার দিকে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়েছে। আর একই সময়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পড়ে শোনানোর জন্য পরোয়ানা কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের পরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে ট্রাইব্যুনালের জ্যেষ্ঠ আইন কর্মকর্তা পারভেজ আহমেদ ও লাইব্রেরিয়ান তাপস কুমার রায় ডিসপ্যাচ শাখার কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম পরোয়ানাটি কারাগারে নিয়ে যান।
মৃত্যু পরোয়ানা পাওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসি কার্যকরে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করবে। তবে রিভিউ আবেদন করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরোয়ানা স্থগিত হয়ে যাবে। এর আগে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ পরোয়ানা জারি করেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী। তিন বিচারপতি সকালেই পরোয়ানায় সই করেন।
সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ এ মুহূর্তে কারাগারে আছেন। গত বুধবার মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া সাকা চৌধুরী ও মোহাম্মাদ মুজাহিদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে রায় প্রকাশ করেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করার সুযোগ পাবেন। এ আবেদন খারিজ হয়ে গেলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
গত ২৯ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তাঁর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের দিয়ে চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরা গ্রামে শতাধিক হিন্দুকে হত্যা, রাউজানের গহিরা শ্রী কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা, হিন্দু অধ্যুষিত জগৎমল্লপাড়ায় ৩২ জন নারী-পুরুষকে হত্যা, রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে নেপাল চন্দ্র ধর, মণীন্দ্র লাল ধর, উপেন্দ্র লাল ধরকে গুলি করে হত্যা ও অনিল বরণ ধরকে আহত করা, রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় ক্ষীতিশ মহাজনের বাড়ির পেছনে পুকুরপাড়ে হিন্দু নর-নারীদের হত্যা, চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তাঁর ছেলে শেখ আলমগীরসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে নিয়ে হত্যা, কোতোয়ালি থানার হাজারী লেনের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পোড়োবাড়ি থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ, সিরাজ ও ওয়াহেদ ওরফে ঝুনু পাগলাকে অপহরণ ও নির্যাতন, গুডস হিলের নির্যাতন সেলে সালেহ উদ্দিন নামের একজনকে নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে সাকার বিরুদ্ধে।
২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এই রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন বিএনপি নেতা। হরতালের আগের রাতে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরী। এরপর ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এ ছাড়া গত ১৬ জুন আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেন।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার হন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ। এ ঘটনায় ২০১১ সালের ২১ জুলাই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন কর্মকর্তারা।
এরপর ২ আগস্ট তাঁকে অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে ২০১২ সালের ২১ জুন মুজাহিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট সাতটি অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। নির্যাতনের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১১ আগস্ট আপিল করেন মুজাহিদ।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকার চামেলীবাগ থেকে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপহরণ ও হত্যা, ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন থানার বিভিন্ন গ্রামের ৩০০-৩৫০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ৫০-৬০ জন হিন্দু নর-নারীকে হত্যা, ফরিদপুরের খাবাসপুর মসজিদের সামনে থেকে রাজাকাররা ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার গোয়াল চামট এলাকার রণজিৎ নাথ ওরফে বাবু নাথকে নির্যাতন, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থেকে মো. আবু ইউসুফ ওরফে পাখিকে আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন, ইসলামী ছাত্রসংঘের আরেক নেতা মতিউর রহমান নিজামীসহ ঢাকার নাখালপাড়ার পুরোনো এমপি হোস্টেলের আর্মি ক্যাম্পে সুরকার আলতাফ মাহমুদ, জহির উদ্দিন জালাল, বদি, রুমি, জুয়েল ও আজাদকে গালাগাল, ঢাকার মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যাম্পে স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্র, ১০ ডিসেম্বর থেকে পরিচালিত বুদ্ধিজীবী নিধনসহ হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়নের মতো যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা সংঘটন, ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দুদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ রয়েছে মুজাহিদের বিরুদ্ধে।