একসঙ্গে কাজ করছে জেএমবি-আইএস!

বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের কর্মকাণ্ড আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে ‘আইএসের সমন্বয়ক’ হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীর বিচার শুরু হচ্ছে। সাখাওয়াতুল কবীর নামে ওই ব্যক্তি শুধু আইএসের সমন্বয়ক নন, জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশেরও (জেএমবি) আঞ্চলিক সমন্বয়ক। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) এমনটিই উল্লেখ করেছে পুলিশ।
গত ১৫ মে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘জব্দকৃত আলামত, সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রমাণিত হয়েছে যে, উল্লিখিত আসামিরা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সক্রিয় সদস্য। এক নম্বর আসামি শাফায়াতুল জেএমবির আঞ্চলিক সমন্বয়ক। সে পাকিস্তান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে জেএমবির পাশাপাশি আইএসআইএসের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছে।’
আইএস ও জেএমবি বাংলাদেশে একসঙ্গে কার্যক্রম চালাচ্ছে –এমন বিষয়ও উল্লেখ করা হয় অভিযোগপত্রে, ‘তারা জেএমবি ও আইএসআইএসের মতাদর্শে উজ্জীবিত হয়ে পরস্পর যোগসাজশে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য গোপনে বিভিন্ন ভিডিও প্রদর্শন ও জিহাদি লিফলেট বিতরণ করেছে।’
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীর খানবাড়ী চৌরাস্তা এলাকার একটি বাড়ি থেকে চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে পুলিশ সাংবাদিকদের জানায়, বাংলাদেশ থেকে আইএসের জন্য সদস্য সংগ্রহের উদ্দেশে গোপন বৈঠক করার অভিযোগে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই দিনই যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা করা হয়।
সাখাওয়াতুল কবীর ছাড়া অন্য তিন আসামি হলেন আনোয়ার হোসেন, মো. রবিউল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম। আসামিরা সবাই কারাগারে আছেন।
প্রায় পাঁচ মাস তদন্ত শেষে গত ১৫ মে এই মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) পরিদর্শক এ কে এম কামরুল আহসান ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ৬ জুলাই ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেন। আসছে ১৫ অক্টোবর এ মামলায় অভিযোগ গঠনের জন্য দিন নির্ধারিত হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহসান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা মূলত জেএমবির সদস্য। একই সঙ্গে তারা আইএসেরও অনুসারী। এদের মধ্যে একজন সাখাওয়াতুল কবীর যে আইএসের সমন্বয়কের কাজ করত, তা অভিযোগপত্রেই উল্লেখ করেছি। তবে তারা বেশিদূর অগ্রসর হওয়ার আগেই আমরা তাদের গ্রেপ্তার করি।’
গ্রেপ্তার হওয়া সাখাওয়াতুল কবীর পাকিস্তানে গেছেন এমন প্রমাণ তাঁর পাসপোর্টেই পাওয়া গেছে উল্লেখ করে কামরুল আহসান বলেন, ‘সাখাওয়াত নিজেই স্বীকার করেছে যে সে পাকিস্তানে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সাখাওয়াত কবীর পাকিস্তান থেকে আইএসআইএসের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে।’
এ ছাড়া পাকিস্তানে পুলিশের সঙ্গে আইএস সদস্যদের গুলিবিনিময়ে সাখাওয়াত কবীরের দুই আত্মীয় নিহত হন বলেও জানান কামরুল আহসান। এছাড়া এর আগে সাখাওয়াত জেএমবি সদস্য হিসেবে একটি মামলায় কারাদণ্ডও ভোগ করেছেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘ধৃত আসামিদের তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে যে, তারা সবাই আইএসআইএসের সক্রিয় সদস্য। বর্তমানে দেশের গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে উৎখাতের মাধ্যমে আইএসআইএস কর্তৃক নির্দেশিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য তারা এ সব ভিডিও প্রদর্শন ও জিহাদী লিফলেট প্রচারের মাধ্যমে গোপনে অর্থ ও কর্মী সংগ্রহ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের টার্গেট করে হত্যা ইত্যাদির মাধ্যমে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসআইএসের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে ও সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে আসছে। তারা আইএসআইএসের কাছ থেকে অর্থ ও মারাত্মক অস্ত্র সংগ্রহ করে ও বিস্ফোরক দ্রব্যের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা করত ক্ষতিসাধন, হুমকির সৃষ্টি ও খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। তারা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধঘোষিত জেএমবির সদস্য হলেও বর্তমানে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসআইএসের সঙ্গে গোপন যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে তাদের সংগঠন তৈরি, সদস্য সংগ্রহ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার নেতৃত্বে আছে বলে স্বীকার করে। তাদের সংগঠনের অনেক সদস্য বর্তমানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তৎপর রয়েছে।’