খুলনায় ৮ খণ্ড লাশের দুই পা উদ্ধার, দুজন আটক

খুলনায় আট খণ্ড করে কলেজছাত্র হাবিবুর রহমান সবুজকে (২৬) হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে সরদার আসাদুজ্জামান ও অনুপম নামের দুই যুবককে আটক করেছে র্যাব। এ সময় হাবিবুরের খণ্ডিত দেহের অবশিষ্ট দুটি পা উদ্ধার করা হয়।
আজ সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে খুলনা মহানগরীর কুয়েটসংলগ্ন ফুলবাড়ি গেট ও বটিয়াঘাটা এলাকা থেকে ওই দুই যুবককে আটক করে খুলনা র্যাব ৬-এর সদস্যরা। পরে আটক আসাদুজ্জামানের স্বীকারোক্তি অনুসারে ফারাজীপাড়ায় তাঁর ভাড়া বাসা থেকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় নিহতের খণ্ডিত দুই পা ও তাঁর মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
র্যাব ৬-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ মো. সুরুস সালেহিন ইউসুফ বলেন, ‘গত ৭ মার্চ খুলনাতে যে একটা চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, যেটার খণ্ড-বিখণ্ড লাশের অংশ বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া গিয়েছিল। সেটার ভিত্তিতে আমাদের র্যাব-৬ ছায়াতদন্ত শুরু করে। এ তদন্তের মাধ্যমে গোপন সূত্রের ভিত্তিতে আমরা আজকে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে হত্যাকাণ্ডের যে মূল আসামি সরদার আসাদুজ্জামান, যার বাড়ি বাগেরহাটের ফকিরহাট, তাকে কুয়েটসংলগ্ন এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করি। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ফারাজিপাড়ায় একটি বাসার নিচের একটি কক্ষে, যেখানে সে গত তিন মাস ধরে ভাড়া নিয়ে আছে, সেখানে তার ঘরটা আমরা সার্চ করি।’
খুলনায় আট খণ্ড করে কলেজছাত্র হাবিবুর রহমান সবুজকে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সরদার আসাদুজ্জামান ও অনুপম। ছবি : এনটিভি
‘সার্চ করার সময় তার খাটের নিচ থেকে লাশের বিভিন্ন কাটা অংশ পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায়। তার বাথরুমে একটি বালতির ভিতরেও কয়েক খণ্ডে বিভক্ত লাশের কিছু অংশ পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায় এবং আমরা তার ঘর সার্চ করার সময় এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত যে ছুরি এবং দা আছে, সেখানে একেবারে লাশের অংশ লেগে থাকা অবস্থায় ভিতরে আছে, সেটা আমরা শনাক্ত করি এবং মৃত ব্যক্তি, যার নাম হাবিবুর রহমান, তার ব্যবহৃত যে হোন্ডাটা, সেই হোন্ডাটাও এই রুমের ভেতরে পাওয়া যায়। এ হত্যাকাণ্ডে আরো কেউ জড়িত আছে কি না, বা কীভাবে সে হত্যাটি করল, এটার জন্য তদন্ত চলমান থাকবে’, বলেন র্যাব ৬-এর অধিনায়ক।
র্যাবের স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার মেজর শামীম সরকার জানান, ভোরে আসাদুজ্জামানকে আটকের পর, কাছাকাছি সময়েই এ হত্যাকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে বটিয়াঘাটার নিজ বাসা অনুপম নামের আরো এক যুবককে আটক করা হয়।
খুলনা মহানগরীর ফারাজিপাড়ায় এই বাসা থেকে কলেজছাত্র হাবিবুর রহমান সবুজের খণ্ডিত দেহের বাকি অংশ উদ্ধার করা হয়। ছবি : এনটিভি
নিহত কলেজছাত্র হাবিবুর রহমান সবুজের বাবা আবদুল হামিদ সরদার জানান, গত ৫ মার্চ বেড়ানোর কথা বলে মোটরসাইকেলে করে খুলনায় যান হাবিবুর। কিন্তু তারপর থেকে তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরবর্তী সময়ে ৮ মার্চ সকালে সবুজের ফোন থেকে বাড়িতে একটি কল আসে। ফোনের ওই প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘সবুজকে আমরা বেঁধে রেখেছি। ছয় লাখ টাকা দিলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’
এদিকে এর আগের দিন ৭ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খুলনা মহানগরীর শেরে বাংলা রোডে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় অজ্ঞাত ব্যক্তির টুকরা করা লাশের একটি অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে দুপুরের দিকে ফারাজিপাড়া রোডে ড্রেনের পাশ থেকে দুটি ব্যাগে টুকরা করা অবস্থায় লাশের মাথা ও দুই হাত উদ্ধার করা হয়।
গণমাধ্যমে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের সংবাদ শুনে ৮ মার্চ খুলনায় গিয়ে হাবিবুরের লাশ শনাক্ত করেন তাঁর বাবা। পরে ওই ঘটনায় ৯ মার্চ নিহতের ভগ্নিপতি গোলাম মোস্তফা খুলনা সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে হাবিবুরের বাড়িতে যাওয়া ফোনকলের সূত্র ধরেই আসাদুজ্জামানকে আটকে সক্ষম হয় র্যাব।