স্কুলছাত্রীর যৌন হয়রানির মামলায় গ্রেপ্তারের পর মুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান

এক স্কুলছাত্রীর যৌন হয়রানির মামলায় গ্রেপ্তারের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তফা কামাল। বুধবার সন্ধ্যায় তাঁকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।
রাজশাহী জেলার আদালত পরিদর্শক আব্দুস সবুর জানান, বাগমারায় যৌন হয়রানির মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালকে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী আমলি আদালত ৪-এ হাজির করা হয়। এ সময় তাঁর আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম জুয়েল অধিকারী ইউপি চেয়ারম্যানের জামিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নে গত ৩ মে এক স্কুলছাত্রীকে ভুট্টাক্ষেতে তুলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে তৌহিদ আলী (২৫) নামের এক যুবক। ‘হাতেনাতে আটক’ তৌহিদকে সালিশ বৈঠকে কান ধরে ওঠবস করিয়ে ছেড়ে দেন ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল। এ ঘটনায় গত ৫ মে স্কুলছাত্রীর দাদা বাদী হয়ে বাগমারা থানায় মামলা করেন। পরের দিন পুলিশ তৌহিদকে গ্রেপ্তার করে। বিবাহিত তৌহিদ সম্প্রতি তার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করেছে।
শিশুটির স্বজনদের অভিযোগ, স্থানীয় স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রী (১২) গত ৩ মে সকালে প্রতিবেশী এক ছোটভাইকে নিয়ে মাঠে ঘাস কাটতে যায়। বেলা ১১টার দিকে তৌহিদ ওই ছাত্রীকে জোর করে ভুট্টাক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় দুই শিশুর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তৌহিদকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। পরে তাকে মারপিট করে আটকে রাখে গ্রামবাসী। বিকেলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে তৌহিদকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যান। সেখানে সালিশ বৈঠক বসিয়ে কান ধরে ক্ষমা চাওয়ার পর তৌহিদকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য বলেন, মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের পর ওই যুবককে ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নামমাত্র সালিশ বৈঠক বসানোর পর তাকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। ধর্ষণের চেষ্টাকারী তৌহিদ কান ধরে ক্ষমা চাওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে এলাকার লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তবে আপস-মীমাংসার জন্য অর্থ লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে যোগীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, বিষয়টি জানার পর গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে ওই ছেলেকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসা হয়। প্রথমে মেয়ের বাবাকে মামলা করার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু মেয়ের কথা ভেবে তিনি রাজি হননি। সে কারণে সালিশ বৈঠক বসিয়ে আপস-মীমাংসা করে দেওয়া হয়।
ছেলেটি শুধু মেয়েটির গায়ে হাত দিয়েছে, ধর্ষণের চেষ্টা করেনি দাবি করে মোস্তফা কামাল বলেন, সালিশ বৈঠকের আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসির অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। তাদের অনুমতিক্রমে ৪০ থেকে ৫০ জন লোকের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক করে মীমাংসা করা হয়। সালিশ শেষে তৌহিদ কান ধরে সবার কাছে ক্ষমা চায় এবং আর কোনোদিন এ ধরনের ঘটনা ঘটাবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এ ঘটনায় তার কাছে লিখিতও নেওয়া হয়েছে।