রুবেল নিজেই তাভেলাকে গুলি করে

ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজারকে নিজেই গুলি করে হত্যা করেছেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তামজীদ আহমেদ রুবেল ওরফে শ্যুটার রুবেল।
আজ সোমবার ঢাকার মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনানের আদালতে রুবেল ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন শ্যুটার রুবেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগ্নে রাসেল, রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কী রাসেল একসঙ্গে মোটরসাইকেলে করে গুলশানে যান। ওখানে শ্যুটার রুবেল নিজে ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজারকে গুলি করে হত্যা করেন।
এর আগে আজ বেলা ৩টায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে শ্যুটার রুবেলসহ তিনজনকে হাজির করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক জেহাদ হোসেন। তিনি শ্যুটার রুবেলের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন জানান। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রুবেলকে ঢাকা মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনানের আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক আইন-অনুযায়ী রুবেলকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন কি না, সে জন্য ঘণ্টা খানেক সময়ে বেঁধে দেন। পরে রুবেল স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হলে বিচারক তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
অন্যদিকে বাকি তিন আসামিকে ১০ দিন করে রিমান্ডের নেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি রিমান্ডের আবেদনে উল্লেখ করেন, আসামিরা তাঁদের গডফাদারের নির্দেশে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য অর্থাৎ দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে তাঁরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করেছে। এ ছাড়া চাঞ্চল্যকর বিদেশি হত্যাকাণ্ডের এই মামলাটির পূর্ণাঙ্গ রহস্য উদঘাটন, নেপথ্যে থাকা অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারসহ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা অস্ত্র উদ্ধারের লক্ষ্যে আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
এ রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমান আসামি তিনজনের প্রত্যেককে আটদিন করে রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডে নেওয়া আসামিরা হলেন মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগ্নে রাসেল, রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কী রাসেল ও শাখাওয়াত হোসেন শরীফ।
গতকাল রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে গুলশান ও বাড্ডার বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে তাভেলা হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও জব্দ করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, এক বড় ভাইয়ের নির্দেশে তাঁরা তাভেলাকে হত্যা করেন।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। এক বড় ভাইয়ের নির্দেশে এবং টাকার প্রলোভনে তাঁরা এ কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
কমিশনার আরো জানান, এঁদের মধ্যে ভাগ্নে রাসেল ও চাক্কী রাসেল মাদকাসক্ত। এ ছাড়া তাঁরা চিহ্নিত অপরাধী। এ ছাড়া তাঁরা বিভিন্ন মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। রুবেল ঠান্ডা মাথার খুনি, আর শরীফ ইয়াবা ও অস্ত্র সরবরাহকারী।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে ভাগ্নে রাসেল ও চাক্কী রাসেল বাড্ডা এলাকায় শরীফ নামে এক ব্যক্তির কাছে যান মোটরসাইকেলের জন্য। পরে শরীফের কাছ থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে রাতে কাজ সেরে রাতেই আবার তা মোটরসাইকেল মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেন।
আছাদুজ্জামান মিয়া আরো বলেন, ‘গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা কথিত বড় ভাইয়ের নির্দেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন। ওই বড় ভাইকে খুঁজে বের করতে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে। সেই সঙ্গে এর পেছনে যদি আরো কেউ সম্পৃক্ত থাকে তবে তাদেরও খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
গত ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশানে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন চেসারে তাভেলা। এ ঘটনায় ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইসিসিও কো-অপারেশনের বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি হেলেন সাফ ভ্যান ডাক বিক বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঘটনার পর সিসিটিভি ফুটেজে তাভেলাকে গুলি করে তিন হত্যাকারীকে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যেতে দেখা যায়।
৫০ বছর বয়সী তাভেলা সিজার আইসিসিও কো-অপারেশনের ‘প্রফিটেবল অপরচুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন।