মসজিদ থেকে নেমে মানুষ দেয় দৌড়, ভিক্ষা দিবে কখন?

বড় ভাই আবজর আলী ভ্যানগাড়িতে পলিথিন জড়িয়ে শুয়ে আছেন। বৃষ্টি থেকে নিজের মুখ ও মাথা বাঁচাতে ছাতা মেলে ধরে আছেন নিজের হাতেই। ভ্যানগাড়ি চালাচ্ছেন ছোট ভাই মফিজ।
দুই ভাই পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানী মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের কালশী এলাকায়। মিরপুর থেকে ভিক্ষা করতে এসেছিলেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। ভিক্ষা শেষে বায়তুল মোকাররম থেকে বাসায় ফিরে যাওয়ার সময় আগারগাঁও এলাকায় এনটিভি অনলাইনের মুখোমুখি হন দুই ভাই।
দাঁড়িয়ে কথা বলতে চাইলে সানন্দে রাজি হন মফিজ। তবে ইতস্তত করছিলেন বড় ভাই আবজর আলী। কোথা থেকে এসেছেন, জানতে চাইলে মফিজ বলেন, বড় ভাই অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার। ভিক্ষা করে টাকা জোগাড় করছি ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য। থাকি মিরপুরে। গিয়েছিলাম বায়তুল মোকাররম মসজিদে। বৃষ্টির জন্য কী আর ভিক্ষা করা যায়! মানুষ মসজিদ থেকে নেমেই দৌড় দেয়। অনেকটা আক্ষেপ করেই বললেন মফিজ।
আপনাদের মধ্যে কে ভিক্ষা করেন?
প্রশ্ন শুনে অনেক ইতস্তত করেই জবাব দিলেন মফিজ। বললেন, ধরেন আমরা দুজনই ভিক্ষুক। ভাই তো অসুস্থ। শুয়ে থাকে। তেমন কথা বলতে পারে না। আমিই ভাইয়ের জন্য ভিক্ষা চাই।
এতটা পথ পাড়ি দিয়ে মিরপুর থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদে গিয়ে কত টাকা পেলেন?
খুব একটা হয়নি। অন্যান্য ঈদে যা পাই তার তুলনায় কিছুই না। তার পরও সেই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একটানা মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে ভিজছি। কেউ কেউ কিছু দিছে।
ঈদের দিনেও ভিক্ষা করতে নামলেন কেন?
জবাবে মফিজ বললেন, শবে বরাত, শবে কদর ও ঈদের দিনগুলোতেই আয় ভালো হয়। মানুষ এ দিনগুলোতে ভিক্ষা দেয় বেশি। তবে আগামী দুই-তিন দিন ভিক্ষায় নামব না।
বড় ভাই আবজর আলীর মাথার নিচে বালিশ। ভ্যানগাড়ির নিচে রয়েছে একটি পোটলা। পোটলাতে কী জানতে চাইলে মফিজ বললেন, প্লেট, পানির বোতল ও কিছু খাবার-দাবারও আছে।
ভিক্ষার টাকায় দুই ভাইয়ের সংসার চালানোর পর চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। এত টাকা কি ভিক্ষা করে পাবেন? এ প্রশ্ন শুনে হাসতে হাসতে মফিজ বললেন, ‘আল্লাহ পাক চালিয়ে নেন।’ এ বলেই প্যাডেলে চাপ দিলেন মফিজ।