বরগুনায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা : রিফাত ফরাজী ফের রিমান্ডে

বরগুনা শহরে স্ত্রীর সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবার রিমান্ডে পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় আদালতে হাজির করে রিফাতের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সিরাজুল ইসলাম গাজী আসামি রিফাতের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) ও বরগুনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির আজ মঙ্গলবার সকালে বলেন, ‘গত ২ জুলাই নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা ও একটি অস্ত্র মামলা দায়ের করে। দুটি মামলায় রিফাত ফরাজীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের দায়ের করা অস্ত্র মামলায় রিফাত ফরাজীকে গতকাল আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। পরে আদালত রিফাতের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগেও রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাত ফরাজী সাত দিনের রিমান্ডে ছিল।’
পুলিশ জানিয়েছে, রিফাত ফরাজীসহ অন্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি গ্রুপে সংঘবদ্ধ ছিল। সেই গ্রুপটির নাম ‘জিরে জিরো সেভেন’। এই গ্রুপটির সেকেন্ড ইন কমান্ড রিফাত ফরাজী।
গত ২ জুলাই দিবাগত রাত ২টার দিকে রিফাত ফরাজীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন সকালে এক সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. শফিকুল ইসলাম রিফাত ফরাজীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান। এরপর তাকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করে ফের তাকে রিমান্ডে পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ একদল যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো দা দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। রিফাতের স্ত্রী আয়শা হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের থামানো যায়নি। তারা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়।
এ হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বৃহস্পতিবার সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন।
এরপর বিভিন্ন সময়ে পুলিশ এ মামলায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে গত ১ হত্যা মামলার ১১ নম্বর আসামি মো. অলিউল্লাহ অলি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা তানভীর একই আদালতে স্বেচ্ছায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
গত ৪ জুলাই হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি চন্দন ও ৯ নম্বর আসামি মো. হাসানও একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
৫ জুলাই একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় হত্যাকাণ্ডের ফুটেজ দেখে শনাক্ত হওয়া ও তদন্তে বেরিয়ে আসা মো. সাগর ও নাজমুল হাসান।
এদিকে এ মামলার দ্বিতীয় আসামি রিফাত ফরাজীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি রামদা বরগুনা সরকারি কলেজের পাশের একটি খাল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগের রাতে গ্রেপ্তার করা হয় সন্দেহভাজন আরিয়ান শ্রাবণকে। পরে গতকাল তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পায় পুলিশ।
এ ছাড়া এ মামলার ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয়, সন্দেহভাজন সাইমুন ও রাফিউল ইসলাম রাব্বিও পাঁচদিনের রিমান্ডে রয়েছেন।