দীপনের বাবা হত্যাকারীদের মতাদর্শে বিশ্বাসী : হানিফ
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/11/01/photo-1446383952.jpg)
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ মনে করেন, নিহত প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক তাঁর সন্তানের হত্যাকারীদের আদর্শে বিশ্বাসী। এ কারণেই তিনি ছেলে হত্যার বিচার চান না।urgentPhoto
আজ রোববার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন হানিফ। জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের জনসভার প্রস্তুতি দেখতে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি যতটুকু দেখেছি, নিহত দীপনের বাবা আবুল কাশেম ফজলুল হক উনি বলেছেন যে, উনি আসলে ছেলে হত্যার বিচার চান না। কারণ বলেছেন, এটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। আমি খুব অবাক হয়েছি। আমার মনে হয়, এই খবরটা যারা পড়েছে, তাতে পুরো জাতি অবাক হয়েছেন।’
‘একজন ছেলেহারা বাবা তাঁর সন্তান হত্যার বিচার চান না। এই প্রথম বাংলাদেশে এ রকম একটা ঘটনা দেখলাম। আমার মনে হয়, পৃথিবীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি যে, কোনো বাবা তাঁর ছেলের হত্যার বিচার চান না। আমার মনে হয়, এর কারণ একটাই, ছেলেহারা বাবা অধ্যাপক সাহেব হয়তো ওই রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী, যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। উনি তাঁর দলের লোকজনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাননি বলেই হয়তো এ কথা বলেছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। আমিও একজন বাবা। বাবা হিসেবে আমি তাঁর এই বক্তব্যের জন্য লজ্জিত।’
এসব ঘটনায় সরকার বিব্রত নয় বলেও জানান হানিফ। তিনি বলেন, ‘দু-একটা ঘটনায় সরকারের বিব্রত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে তো বহু আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বিব্রত হতো। সেখানে এ রকম বহু ঘটনা ঘটেছে।’
এটা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে হানিফ আরো বলেন, এটা আমরা আগেও বলে এসেছি। একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে এ কাজ করছে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনী সংস্থার কার্যালয় থেকে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ফয়সল আরেফিন দীপনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। দুর্বৃত্তরা তাঁকে নির্মমভাবে কুপিয়ে কার্যালয়ের দরজা বন্ধ করে চলে যায়।
এর আগে দুপুরে রাজধানীর লালমাটিয়ার সি ব্লকে প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল, লেখক ও ব্লগার রণদীপম বসু ও তারেক রহিমকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে সন্ত্রাসীরা। সেখানেও দুর্বৃত্তরা আহতদের তালাবদ্ধ করে রেখে পালিয়ে যায়।
প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল ও ফয়সল আরেফিন দীপন উভয়ের প্রকাশনা সংস্থা থেকেই নিহত ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশিত হয়েছিল।
লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর কার্যালয়ে হামলার খবর শুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক ছেলে দীপনের মোবাইল ফোনে কল করেন। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে জাগৃতি প্রকাশনী সংস্থার কার্যালয়ে ছুটে আসেন। এ সময় কার্যালয়ে দরজা বন্ধ দেখতে পান। দরজা খুলে ছেলেকে সেখানে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর দীপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ সময় শোকে বিহ্বল আবুল কাশেম ফজলুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘সে (দীপন)অভিজিৎ রায়ের বই বের করেছিল এবং অভিজিৎ রায়ের বই যারা বের করেছিল তার মধ্যে দীপনকে আজ মেরে ফেলেছে। অন্যদের মেরে ফেলতে পারে নাই। হয়তো তাদের আশপাশে লোক ছিল, কিছু একটা।’
ছেলে হত্যার ঘটনায় বিচারের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। এখানে আমি বিচার চাই না। জানি, বিচার চেয়ে কোনো প্রতিকার হবে না।’
এরপর আজ রোববার দুপুরের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে ছেলের লাশ নিয়ে আগের কথারই প্রতিধ্বনি করেন অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। এ সময় তিনি বলেন, ‘কালকে আমি যে কথা বলেছি, সেটা যৌক্তিকভাবে বলেছি, সেটা কোনো আবেগ বা উত্তেজনার কথা নয়।’
প্রবীণ এই শিক্ষক জানান, নিয়ম অনুযায়ী একটি মামলা তিনি করবেন। কারণ হিসেবে বলেন, ‘আমি আইন মেনে চলি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অথরিটি (কর্তৃপক্ষ) বলেছে একটি দরখাস্ত দিতে। আমি আজকে দেব। আজকে না পারলে আগামীকাল দেব। তার মানে এই নয় যে আমি এর ওপর নির্ভর করি। আমি শুভবুদ্ধির জাগরণ চাই, সমাজে, রাজনীতিতে, বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে।’
ব্লগার হত্যার সম্প্রতিক ঘটনাগুলোর বিচার সম্পর্কে আবুল কাসেম বলেন, ‘ঘটনা ঘটছে। এর জন্য সরকার চেষ্টা করছে রীতি অনুযায়ী পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা বাহিনী দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় আদর্শগতভাবে, রাজনৈতিকভাবে আগে সমাধান করতে হবে। সেই সঙ্গে নিতে হবে আইনগত ব্যবস্থা। যদি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করা না যায়, শুধু আইনগত ব্যবস্থা দিয়ে এটি সমাধান করা যাবে না। এই ঘটনা আজ ভারত ও পাকিস্তানে ঘটছে, মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোতে তো আছেই। তাই এটিকে রাজনৈতিকভাবে, আদর্শগতভাবে গভীরভাবে দেখা উচিত।’