স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে পিডিবির প্রকৌশলী জেলহাজতে

স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলায় নওগাঁ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) উপসহকারী প্রকৌশলী লাহরী খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ আজ সোমবার দুপুরে তাঁকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করে।
নওগাঁর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক প্রকৌশলী লাহরী খানের জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠান এবং রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।
এর আগে প্রকৌশলী লাহরী খানসহ পাঁচজনকে আসামি করে গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টায় নওগাঁ সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন তাঁর শাশুড়ি। তিনি যৌতুকের দাবিতে মেয়েকে মারপিটের অভিযোগ আনেন আসামিদের বিরুদ্ধে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন নওগাঁ পিডিবির উপসহকারী প্রকৌশলী হারুন উর রশিদ, সহকারী প্রকৌশলী ফজলুল করিম, নওগাঁ পিডিবির শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ ও বাসার মালিক নজিপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বিদ্যুৎ।
মামলার পর রোববার রাতেই সদর মডেল থানার পুলিশ লাহরী খানকে তাঁর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে, আজ সোমবার সকালে নওগাঁ সদর মডেল থানায় উপসহকারী প্রকৌশলী লাহরী খান সাংবাদিকদের জানান, তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত। পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করলে প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসবে।
লাহরী খান নিজেকে নির্দোষ ও ষড়যন্ত্রের শিকার দাবি করে বলেন, পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করার পর গত ২৪ অক্টোবর রাতে নওগাঁ সদর থানায় বসে পুলিশ, প্রতিবেশী ও স্ত্রীর মা-বাবার উপস্থিতিতে তাঁদের তালাক সম্পন্ন হয়। স্ত্রীকে দেনমোহর ও তিন মাসের খরচের টাকাসহ এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে দেন। পরে তারা মাইক্রোবাসে করে কুষ্টিয়ায় চলে যান। এ ঘটনায় অপমান বোধ ও মেয়ের জন্য সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার লজ্জায়-ঘৃণায় মা-বাবা তাঁর মেয়েকে বেদম মারপিট করে। আর ওই মারপিটের ছবি তুলে ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন বলে তাঁর ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি দায়ের করা মামলা মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত বলে দাবি করেন।
কয়েক দিন আগে প্রকৌশলী লাহরী খান সংবাদ সম্মেলন করে জানান, সাত মাস আগে বগুড়া থেকে বদলি নিয়ে নওগাঁ পিডিবিতে যোগ দেন। এক মাস আগে স্ত্রীকে নিয়ে নওগাঁ শহরের চকুমুক্তার এলাকার কলেজ শিক্ষক মনিরুজ্জামান বিদ্যুতের ভাড়া বাড়িতে ওঠেন। ২২ অক্টোবর বিকেলে তাঁর স্ত্রী কুষ্টিয়া থেকে ফোনে ডেকে নিয়ে আসে তার প্রেমিককে। তাঁরা অবস্থান করছিলেন তাঁর ভাড়া বাসায়। ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি আকস্মিক বাসায় চলে এলে তাঁরা বিপাকে পড়েন। এ সময় লাহারী খান কফি খেতে চাইলে তাঁর স্ত্রী পাশের ঘরে প্রেমিককে রেখে তাঁকে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে কফি খাওয়ান। এরপর তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। পরের দিন ২৩ অক্টোবর সকাল ৬টায় ঘুম ভাঙে তাঁর। এ সময় স্ত্রীকে পাশের ঘরে প্রেমিকের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে দেন তিনি। খবর দেন বাড়ির মালিকসহ প্রতিবেশীদের। পরে পুলিশ এসে নিরাপত্তার জন্য তাঁদের থানায় নিয়ে যায়।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকিরুল ইসলাম জানান, গত ২৩ অক্টোবর স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে প্রকৌশলীর স্ত্রী ও প্রেমিককে থানায় আনার পর তাদের পরিবারের লোকজনকে ডাকা হয়। গৃহবধূ ও তাঁর মা-বাবার ইচ্ছায় তালাক সম্পন্ন করে স্বেচ্ছায় দেনমোহরসহ যাবতীয় দেনা-পাওনা নিয়ে তারা নওগাঁ থেকে কুষ্টিয়া চলে যান। এ ঘটনা নিয়ে কয়েকটি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সংবাদ প্রকাশ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার ১০ দিন পর রোববার রাত সাড়ে ১১টায় ওই গৃহবধূর পক্ষে তাঁর মা পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন। এ মামলার প্রধান আসামি লাহরী খানকে আটক করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।