দেশ মহাসংকটে, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিকল্প নেই : মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশ আজ মহাসংকটে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই গণতন্ত্র হরণ হয়। দেশের মানুষ ও গণতন্ত্র অবরুদ্ধ। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিকল্প নেই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই নাজুক। তাঁর ব্লাড সুগার বেড়ে গেছে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তিনি ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। তাঁকে সুচিকিৎসার জন্য অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। আইনের বিধান কার্যকর থাকলে খালেদা জিয়া আজ কারাগারে থাকতেন না। তিনি প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজ শপথ নিতে হবে। দেশের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার এবং খালেদা জিয়ার মুক্তিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এজন্য ঐক্য, ঐক্য এবং ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
এ সময় পুরো সমাবেশস্থলে লাখো মানুষের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’।
আজ বৃহস্পতিবার খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বেলা ৩টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আড়াইটায় সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। তার আগে দুপুরের মধ্যে শহীদ হাদিস পার্ক কানায় কানায় জনতায় পূর্ণ হয়ে যায়। সমাবেশ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির মধ্যেও নেতাকর্মীরা স্লোগানে-স্লোগানে মুখর করে তোলে সমাবেশস্থল। এ সময় খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ও মহানগরী খুলনার বিভিন্ন শাখার ব্যানারে একের পর এক মিছিল সমাবেশস্থলে হাজির হয়। এক সময় তা শহীদ হাদিস পার্ক ছাড়িয়ে দক্ষিণে আপার যশোর রোড, পশ্চিমে এপিসি রোড, পূর্বে কেডি ঘোষ রোড পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সমাবেশ ৫৬ জন বক্তা বক্তব্য দেন।
সমাবেশ পরিচালনা করেন খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনি ও জেলার সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। দিন-দুপুরে আদালতে মানুষ খুন হচ্ছে। গত ৬ মাসে ৪৩৫ জন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, যাদের ন্যূনতম বিচারের অধিকার দেওয়া হয়নি। ধর্ষণের হাত থেকে দুই বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউ রেহাই পাচ্ছে না। সারা দেশে মিথ্যা মামলায় ২৬ লাখ বিএনপি নেতাকর্মীকে জড়ানো হয়েছে। জেলা সদরের অনেক নেতা আজ ঢাকা শহরে রিকশা চালিয়ে এবং হকারি করে জীবন কাটাচ্ছেন।
বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বরগুনায় এমপির আত্মীয়র জড়িত থাকার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে নয়ন বন্ডকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হয়েছে। উল্টো এখন রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে ফাঁসানো হচ্ছে। মিন্নি জড়িত কি না, তা আমরা জানি না, কিন্তু তাঁকে আইনি সহায়তাসহ অধিকারগুলো দেওয়া হচ্ছে না।
আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। একদিন আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে জনগণের সামনে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশের পুলিশ চোর, ডাকাত, খুনি ও অপরাধীদের দমন করবে এটাই নিয়ম, কিন্তু এই পুলিশকে চোর বানিয়েছে সরকার। পুলিশ দিয়ে ২৯ তারিখে ভোট চুরি করেছে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলা তাতে ১৫ দিনের মধ্যে মুক্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি তা পাননি। কারণ আইনের বিধান কার্যকর হয়নি। তিনি এও বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে এই সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে।
সমাবেশের বিশেষ অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ডেঙ্গু মশা মানুষের রক্ত খেয়ে ফেলে। আবার কিছু মানুষ আছে যারা আমাদের রক্ত খেয়ে ফেলছে। তারা কৃষক-শ্রমিকের রক্ত খেয়ে ব্যাংক ডাকাতি করে বিদেশে টাকা পাচার করছে। আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। তাদের ব্যানারে লেখা, ‘চাকরি আছে, বেতন নেই; এই সরকারের দরকার নেই।’ দেশের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ডেঙ্গুর ভয়ে আমি সচিবালয়ে ঢুকি না। সচিবালয় যেখানে নিরাপদ নেই সেখানে দেশের মানুষ কীভাবে আজ নিরাপদে আছে?
খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, গণতন্ত্র না থাকলে মানুষের অধিকার থাকে না।
সমাবেশে অতিথি হিসেবে বক্তব্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম নুরুল ইসলাম দাদু ভাই, মসিউর রহমান, সৈয়দ মেহেদী আহামেদ রুমী, কবির মুরাদ, যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
নির্বাহী কমিটির সম্পাদক ও সহসম্পাদকদের মধ্যে সমাবেশে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মানবাধিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহপ্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, সহ-কোষাধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান খান বাবু, সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সহ-ধর্ম সম্পাদক অমলিন্দু অপু, সহ-ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক নেওয়াজ হালিমা আরলি।
অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, তাঁতী দলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এ কে এম ওয়াজেদ।