অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে মুক্ত লোহাগড়ার সেই পরিবার

অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে মুক্ত হলো নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুচিয়াবাড়ী গ্রামের তরিকুল ইসলামের পরিবার। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁদের বাড়িতে পুলিশ গিয়ে বাঁশের বেড়া অপসারণ করে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শেখ ইমরান, লোহাগড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিল্টন কুমার দেবদাসসহ পুলিশের একটি দল।
পুলিশের এ ধরনের ভূমিকায় খুশি তরিকুলের পরিবারসহ সচেতনমহল।
ভুক্তভোগী তরিকুল ইসলাম বলেন, বাড়ি ও ক্ষেতের জমি বিক্রির অপরাধে পাশের ঝিকড়া গ্রামের হাফিজুর রহমান ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে গতকাল শনিবার সকাল ৮টার দিকে হঠাৎ করে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘরের তিন পাশ ঘিরে ফেলেন। ভয়ে এ অন্যায়ের প্রতিবাদও করতে পারিনি। একপর্যায়ে আমার মা, স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানসহ আমি ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ি। বিষয়টি সাংবাদিকরা জানার পর ওইদিন বেলা ১১টার দিকে লোহাগড়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) জানালেও তিনি কোনো গুরুত্ব দেননি। এ খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর রাতে পুলিশ এসে বাঁশের বেড়া অপসারণ করে। এখন আমার দুই শিশু সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারছে। এজন্য নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
তরিকুল জানান, পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপের পর গ্রামবাসীও বিষয়টি মীমাংসার জন্য নড়েচড়ে বসেছেন। এজন্য আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুচিয়াবাড়ী ইটভাটার পাশে গ্রামবাসী দুইপক্ষের দ্বন্দ্ব মীমাংসার জন্য আলোচনায় বসেন।
এদিকে, নিপীড়িত তরিকুলের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সচেতনমহল। তারা বলেন, পুলিশের এ ধরনের ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। শুধু তরিকুল নয়, সবক্ষেত্রেই পুলিশের এমন ভূমিকা প্রত্যাশা করেন ভুক্তভোগীরা। এতে সমাজে মারামারি, হানাহানি, দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও হতাহতের ঘটনা কমে আসবে। মানুষ ন্যায়-বিচার পাবে।
ভুক্তভোগী তরিকুল জানান, প্রায় ২৫ বছর ধরে নিজের বসতভিটায় বসবাস করছেন তিনি। মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁর সংসার। তাঁর বসতভিটায় প্রায় ৩০ শতক জমি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৫ শতক নিজের কেনা জমি এবং পাঁচ শতক মায়ের প্রাপ্ত জমি। পৈতৃকভিটা ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার কামারগ্রামে বসবাস করার জন্য তরিকুল লোহাগড়ার তালবাড়িয়া গ্রামের জহিরসহ তাঁর তিন ভাইয়ের কাছে প্রায় ৩০ শতক জমি বিক্রি করেন। ভূমি অফিসে জমির কাগজপত্র যাচাই-বাচাই শেষে গত ৩১ জুলাই ওই জমি লোহাগড়ায় রেজিস্ট্রি হয়।
এ ছাড়া গত ৮ আগস্ট ক্ষেতের প্রায় ২১ শতক জমি তরিকুলের প্রতিবেশী শিমুল মোল্যা কেনেন। জমি বেচাকেনার এ বিষয়টি তরিকুলের মামা পাশের ঝিকড়া গ্রামের হাফিজার রহমান জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন।
এ ঘটনায় হাফিজার শনিবার সকালে হঠাৎ করে তরিকুলের ঘরের তিন পাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকে দেন। এছাড়া হাফিজার রহমান জমির ক্রেতাদের জমিতে আসতে দিবেন না বলেও হুমকি দেন।
তরিকুল ইসলাম বলেন, মায়ের সঙ্গে প্রায় ২৫ বছর ধরে কুচিয়াবাড়ির জমিতে বসবাস করছি। আর বাবা আছেন ফরিদপুরের বাড়িতে। তিনি মাঝে-মধ্যে আমাদের খোঁজখবর নেন। এখন নিজের বাড়ি ফরিদপুরের কামারগ্রামে বসবাস করার উদ্দেশ্যে এখানকার (কুচিয়াবাড়ী) জমি বিক্রি করেছি। এ ঘটনায় আমার মামা ঝিকড়া গ্রামের হাফিজুর রহমান আমাদের ঘরের তিন পাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেন। আর ঘরের পেছনের পাশে কোনো দরজা না থাকায় সেদিকে বেড়া দেয়নি। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে আমরা উন্মুক্তভাবে বাড়িতে চলাফেরা করতে পারছি।
তরিকুল আরো বলেন, এ ঘটনার প্রায় দুই বছর আগেও হাফিজুর রহমান আমাদের জমির বড় একটি তালগাছ বিক্রি করে দেন। থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশের হস্তক্ষেপে ওই তালগাছটি ফিরে পাই।
তরিকুলের মা স্বরূপজান বলেন, শনিবার সকাল থেকে আমি এবং আমার ছেলে, ছেলের বউ ও দুই নাতনি ঘর থেকে বের হতে পারছিলাম না। বৈধ জমি বিক্রির পরও হাফিজুর আমাদের হুমকি দেয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান বলেন, পৈতৃকসূত্রে ওই জমিতে আমার অংশ রয়েছে। তাই আমি বেড়া দিয়েছি।
কিন্তু, হঠাৎ করে কেন বেড়া দিলেন? এ প্রশ্ন এড়িয়ে যান হাফিজুর।