উমেদার থেকে ‘জমিদার’ হওয়া মান্নানকে রিমান্ডে চায় পুলিশ

বহুল আলোচিত উমেদার থেকে জমিদার হওয়া নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মান্নান তালুকদার এখন খুলনা জেলা কারাগারে। খুলনার হালিমা খাতুন নামের এক গৃহবধূর মানি লন্ডারিং মামলায় সোনাডাঙ্গা পুলিশ তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। মহানগর মুখ্য হাকিম মো. শাহীদুল ইসলামের আদালতে গতকাল মঙ্গলবার তাঁর রিমান্ড শুনানি হয়। আগামী রোববার রিমান্ডের আদেশ ধার্য করা হয়েছে।
গত ১৩ মে সোনাডাঙ্গা থানায় দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয় আবদুল মান্নান তালুকদার, নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেটের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান, খুলনা শাখার ম্যানেজার মহিউস বুলবুলকে।
মামলায় বলা হয়, তাঁদের সরল কথায় বিশ্বাস করে অধিক মুনাফার আশায় সাড়ে চার লাখ টাকা জমা দেন হালিমা খাতুন। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী টাকা ফেরত ও লভ্যাংশ আনতে গেলে তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়।
গত ১৫ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা ১১০ কোটি টাকা মানি লন্ডারিং মামলায় গ্রেপ্তার হলে সোনাডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তৌহিদুর রহমানের আবেদনে তাঁকে এ মামলায় শোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। পরে পুলিশ আবদুল মান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। গতকাল ছিল রিমান্ড শুনানির দিন।
শুনানিতে অংশ নিয়ে আসামিপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট তারা মাহমুদ রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন। পুলিশের পক্ষে কোর্ট পরিদর্শক রিমান্ড জরুরি বলে আবেদন জানান। বিচারক উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ২৫ আগস্ট রোববার আদেশ দেওয়ার দিন ধার্য করেন।
খুলনা দুদকের ১১০ কোটি টাকা মানি লন্ডারিং মামলায় ১৫ জুলাই আটক হন আবদুল মান্নান তালুকদার। পরে রংপুর জেলায় সাড়ে ২১ কোটি টাকার চেক প্রতারণার তিনটি মামলায়ও তাঁকে শোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়।
এদিকে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লাখ টাকায় মাসে দুই হাজার টাকার মুনাফার আশ্বাস দিয়ে খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, নড়াইল, মঠবাড়িয়া থেকে বিপুল টাকা সংগ্রহ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তদন্ত করে প্রতারণার মাধ্যমে ২৫০ কোটি টাকার আমানত সংগ্রহের প্রমাণ পায়। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেটের বিরুদ্ধে তদন্ত ও মামলার সুপারিশ করে। পরে দুদক তদন্ত করে ১১০ কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের মামলা করে।
এর আগে আবদুল মান্নান তালুকদারকে নিয়ে এনটিভি অনলাইন, এনটিভির ক্রাইম ওয়াচসহ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। এসব প্রতিবেদনে বলা হয়, বাগেরহাট, খুলনা, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, নড়াইল ও যশোর এলাকার সহজ-সরল মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে চার বছরে অর্থ দ্বিগুণ করার প্রলোভন দেখিয়ে ৪০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে দুই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় মান্নান তালুকদারের প্রতিষ্ঠানটি। মাঠকর্মী হিসেবে চরমোনাই পীরের অনুসারীদের ব্যবহার করেন তিনি।
প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্তে মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ পাওয়ায় দুদককে মামলা করার সুপারিশ করে।
দীর্ঘ তদন্তের পর দুদকের সহকারী পরিচালক মো. শাওন মিয়া বাদী হয়ে গত ৩০ মে বাগেরহাট সদর থানায় নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ১১০ কোটি ৩১ লাখ নয় হাজার টাকা প্রতারণা ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করার অভিযোগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ২(গ) ধারায় মামলা করেন। মামলায় নিউ বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মান্নান তালুকদার ও চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমানকে আসামি করা হয়েছিল।
তখন দুদক কর্মকর্তা শাওন মিয়া জানিয়েছিলেন, ১১০ কোটি টাকার যে কাগজপত্র তারা পেয়েছেন, তা শুধু প্রতিষ্ঠানটির বাগেরহাট শাখার। খুলনা বা অন্য কোনো শাখা অফিসের কোনো হিসাবপত্র পাওয়া যায়নি।
তবে এনটিভির কাছে আবদুল মান্নান তালুকদার নিজে তাঁর আমানত দুই হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিলেন বলে স্বীকার করেছিলেন।