জিআরপি থানায় গণধর্ষণ : সেই গৃহবধূর জামিন, গ্রেপ্তার হয়নি আসামিরা

খুলনা রেলওয়ে (জিআরপি) থানায় গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে ফেনসিডিলের মামলায় জামিন দিয়েছেন আদালত। ফুলতলা আমলি আদালতের বিচারক মো. সাইফুজ্জামান আজ বুধবার খুলনা মানবাধিকার সংস্থার অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলামের জিম্মায় এই জামিন দেন।
অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম জানান, গত ২ আগস্ট বেনাপোল থেকে খুলনামুখী ট্রেনে যশোর থেকে খুলনা আসার পথে ওই গৃহবধূকে মোবাইল চুরির সন্দেহে আটক করে রেলপুলিশ। তাঁকে জিআরপি থানায় নিয়ে আসে। এর পর গৃহবধূর পরিবারের অন্য সদস্যদের ডেকে এনে ছেড়ে দেওয়ার জন্য লাখ টাকা দাবি করে রেলপুলিশ। আটক গৃহবধূর ভাই, বোন ও মা এত টাকা দিতে না পেরে রাত ১২টার দিকে থানা থেকে চলে যান।
পরে সেই রাতে গৃহবধূকে বিশ্রামকক্ষে নিয়ে জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উছমান গনি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ একাধিকবার ধর্ষণ ও নানাভাবে নির্যাতন করেন। পরের দিন ৩ আগস্ট আটক গৃহবধূকে পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠান। কিন্তু আদালত আটক গৃহবধূর নির্যাতনের চিহ্ন দেখে আগে চিকিৎসার নির্দেশ দেন। জিআরপি পুলিশ এই সময় ভিকটিমকে নিয়ে খুলনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করান। হাসপাতালে ভর্তি স্লিপে ‘পাবলিক অ্যাসল্ট’ লিখে পুলিশি মামলার সিল দেওয়া হয়। এই স্লিপসহ ভিকটিমকে পরের দিন আদালতে উপস্থাপন করে জিআরপি পুলিশ।
ভিকটিম আদালতে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে থানার ভেতর গণধর্ষণ ও নির্যাতনের কথা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তিনি থানায় গণধর্ষণের ঘটনা জবানবন্দি আকারে দেন। আদালত এই সময় ভিকটিমকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পরীক্ষার নির্দেশ দেন।
আদালত পরবর্তী সময়ে এই জবানবন্দির ভিত্তিতে জিআরপি থানার পাঁচ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা এবং বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।
রেলওয়ে পাকশী বিভাগের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নজরুল ইসলাম খুলনা জিআরপি থানার ওসিসহ পাঁচ পুলিশকে খুলনা থেকে প্রত্যাহার ও মামলা করার নির্দেশ দেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হলে ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে ওই পাঁচ আসামির নামে এজাহার হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এমনকি রহস্যজনকভাবে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়নি। অন্যদিকে জিআরপি থানা পুলিশের ভূমিকার কারণে দুই দফা ভিকটিমের জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত। সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলেও তারা আরো ১৫ দিন সময় বৃদ্ধির আবেদন জানায়।