মা-ছেলেকে হত্যার দায়ে আ.লীগ নেতাসহ ৩ জনের ফাঁসি

রাজশাহীতে আকলিমা বেগম (৪৫) ও তাঁর ছেলে জাহিদ হাসানকে (২৫) গলা কেটে হত্যার দায়ে তিনজনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া আরো চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার সকালে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার সব আসামির উপস্থিতিতে চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের মামলার রায় দেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেউলা রানী রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন মাস্টার (৫২) রয়েছেন। তিনি আকলিমা বেগমের চাচাতো দেবর। বাকি দুজন হলেন দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে হাবিবুর রহমান হাবিব (৪০) ও একই উপজেলার দেবীপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে চাকরিচ্যুত বিজিবি সদস্য আবদুর রাজ্জাক (৩৫)।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন দুর্গাপুর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে আবদুল্লাহ আল কাফি (২২), লবির উদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন (৩০), একই উপজেলার ক্ষুদ্রকাশিপুর গ্রামের ছাবের আলীর ছেলে রুস্তম আলী (২৬) ও ক্ষুদ্রলক্ষ্মীপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম ওরফে মনির (২৩)।
তাঁরা সবাই ভাড়াটে খুনি হিসেবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন বলে আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। রায়ে তাঁদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। রায় ঘোষণার পর আদালতের নির্দেশে আসামিদের রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বলেন, বাগমারা উপজেলার দেউলা গ্রামে নিজ বাড়িতে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে আকলিমা বেগম ও তাঁর ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আকলিমার বড় ছেলে দুলাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে বাগমারা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
এর পর থেকে বিভিন্ন সময় নানা মোড় নেয় এই জোড়া খুনের তদন্ত। তিন দফা বদল করা হয় তদন্ত কর্মকর্তা। সর্বশেষ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটির তদন্ত করে। এরপর এই হত্যাকান্তের রহস্য বেরিয়ে আসে। এরপর ২০১৮ সালের ৩১ মে আদালতে পিবিআইর পরিদর্শক আলমগীর হোসেন এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু বলেন, আকলিমা বেগম ও তাঁর ছেলে জাহিদ হাসানকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন আকলিমা বেগমের চাচাতো দেবর আবুল হোসেন মাস্টার। আকলিমা খাতুনের সম্পদ আত্মসাতেই জন্যই তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। ঘটনার রাতে আবুল হোসেন মাস্টার নিজেই আকলিমা খাতুনকে বালিশ দিয়ে চেপে ধরে। অন্যরা তাঁকে গলা কেটে হত্যা করে। এ সময় বাধা দিতে গেলে আকলিমার ছেলে জাহিদ হাসানকেও তারা একইভাবে হত্যা করে।
এন্তাজুল হক বাবু জানান, দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এ বছরের এপ্রিলে মামলাটি জেলা জজ আদালত থেকে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলাটিতে ৫১ সাক্ষী ছিলেন। আদালত ৪৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। এরপর গত বুধবার উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আজকে রায় ঘোষণার জন্য রাখা হয়।