পুলিশের গাফিলতি খুঁজে পেল না পুলিশ

একাধিকবার থানায় গিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ দিতে না পেরে রাজশাহীর শাহ মখদুম থানার সামনে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে কলেজছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় পুলিশের কোনো গাফিলতি খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি। রাজশাহী মহানগর পুলিশের করা তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করেছে। তবে গায়ে আগুন লাগানোর ঘটনাটি থানায় নথিভুক্ত না করায় শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) কৈফিয়ত তলবের সুপারিশ করেছে কমিটি।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, কলেজছাত্রী লিজা রহমান তাঁর স্বামীর কাছে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অভিযোগ করতে শাহ মখদুম থানায় এসেছিলেন। কিন্তু এটি কোনো ফৌজদারি অপরাধ না হওয়ায় মামলা রেকর্ড করেননি ওসি। পরে লিজাকে দুই নারী কনস্টেবলের সঙ্গে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে এসেই লিজা থানার পাশে মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামনে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে এ ঘটনাটি শাহ মখদুম থানার ওসি রেকর্ড রাখেননি। তাই তাঁকে কৈফিয়ত তলবের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
এর আগে আরএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) সালমা বেগমের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবিরের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।
এদিকে, কলেজছাত্রী লিজা রহমানের আত্মহননের ঘটনায় করা মামলায় তাঁর স্বামী সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাখাওয়াত রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র।
অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, লিজার বাবা আলম মিয়া বাদী হয়ে বুধবার রাতে শাহ মখদুম থানায় মামলাটি করেন। মামলায় তাঁর মেয়েকে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এ জন্য লিজার স্বামী সাখাওয়াত হোসেনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া শ্বশুর মাহাবুব আলম খোকন ও শাশুড়ি নাজনীন বেগমকে আসামি করা হয়েছে।
শাহ মখদুম থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বনী ইসরাইলকে মামলাটি তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর কলেজছাত্রী লিজা তাঁর স্বামী সাখাওয়াত ও স্বামীর পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে নগরীর শাহ মখদুম থানায় যান। থানায় অভিযোগ না নেওয়ায় ক্ষোভে ও অপমানে থানা থেকে বেরিয়েই নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেন তিনি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় লিজাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে অবস্থা অবনতি হওয়ায় তাঁকে ওইদিনই ঢাকায় পাঠান চিকিৎসকরা। এরপর গত বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার হাসপাতালে মারা যান লিজা। তাঁর গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বুজরুক বোয়ালিয়া গ্রামে। গত বৃহস্পতিবার সকালে নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে লিজার মরদেহ দাফন করা হয়েছে।