ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তি সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন : গয়েশ্বর

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, তিস্তায় পানির ন্যায্য হিস্যা পায়নি বাংলাদেশের জনগণ। আবার অসময়ে ফারাক্কার সবগুলো গেট খুলে দিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি করা হয়েছে। ভারতের আবদারে এখন আবার ফেনী নদীর পানি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় রাডার বসিয়ে নজরদারী করবে ভারত! তাতে আর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব থাকল? আবার রাডার বসানোর কারণে অহেতুক অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের বৈরিতার সৃষ্টি হতে পারে।
আজ শনিবার বিকেলে খুলনা নগরীর কে. ডি. ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত জনসমাবেশে এ কথা বলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে করা চুক্তি বাতিল, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে বিএনপি ওই কর্মসূচি ঘোষণা করে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর শাখার সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, মোংলা বন্দর কার স্বার্থে? কিসের বিনিময়ে ভারতকে ব্যবহার করতে দিচ্ছেন? সেটা জানতে চাইতেই পারে বাংলাদেশের জনগণ।
প্রধানমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, জাতীয় সংসদে আলোচনা ছাড়াই আপনি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের পানি, উপকূল, বন্দর ও গ্যাস দিতে পারে না। এটা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ কথা বললেই দেশপ্রেমিক আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করবে আপনার পোষ্য সন্ত্রাসী বাহিনী? নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে আজও রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে পারলেন না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিনা ভোটের সরকারের সব অন্যায়-অপকর্ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের প্রতিবাদ করতে পারতেন খালেদা জিয়া। সে কারণেই তাঁকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলায় প্রহসনের বিচারে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। তাতেও আপনার শেষ রক্ষা হবে না। আজ খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে অমানবিক আচরণ করছেন, সময়ের ব্যবধানে একদিন আপনাকেও এর চেয়ে জঘন্যতম পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড গত ১১ বছর ছাত্রলীগের অপকর্মের বহিঃপ্রকাশ। সমগ্র বাংলাদেশের পবিত্র ক্যাম্পাস দখল করে বিরোধী দল-মত দমনে টর্চার সেল বানিয়ে হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থীর ওপর নিপীড়ন চালিয়ে হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী ও টেন্ডারবাজি করে শিক্ষাঙ্গণে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য বানিয়েছে। যার কারণে মেধাবী ছাত্ররা হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। সব শিক্ষাঙ্গণের ক্যাম্পাস থেকে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগকে উৎখাতে আজ সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। তাদের আন্দোলনের ভাষা দেশবাসীর মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, সম্প্রতি একজন বলেছেন, আমি মা হয়ে আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচার করব। সমস্যা নাই তো। তার উপরের জন বাবা হয়ে খুনিদের সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি দেবেন। আদালতকে আজ্ঞাবহ যন্ত্রে পরিণত করায় দেশের মানুষ তাদের ওপর আস্থা হারিয়েছে। প্রতিটি মুহূর্তে সরকারের প্রতি জনগণ অনাস্থা জানাচ্ছে। সর্বশেষ রংপুরের উপ-নির্বাচনে সেখানকার জনগণ নির্বাচন বয়কট করেছে। কেউ উপস্থিত হয়নি। অবশ্য ভোটার শূন্য নির্বাচনে এ ফ্যাসিস্ট সরকার আগে থেকেই অভ্যস্ত। গেল দুটি জাতীয় নির্বাচনই হয়েছে ডে-নাইট। ভোটগ্রহনের পূর্বেই ব্যালট শেষ।
জনসমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি, শাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, সৈয়দা নার্গিস আলী, আমীর এজাজ খান, দেলোয়ার হোসেন খোকন, অ্যাডভোকেট ফজলে হালিম লিটন, মীর কায়সেদ আলী, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, খান জুলফিকার আলী জুলু, আরিফুজ্জামান অপু, কামরুজ্জামান টুকু, মোল্যা মোশাররফ হোসেন, খায়রুল ইসলাম খান জনি, সৈয়দা রেহেনা ঈসা, মাহবুব হাসান পিয়ারু, মুজিবুর রহমান, একরামুল হক হেলাল ও শফিকুল ইসলাম বাবু প্রমুখ।
শুরুতেই কোরআন তেলোয়াত করেন নগর ওলামা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ শফিকুল ইসলাম। জনসমাবেশ সঞ্চালনা করেন আসাদুজ্জামান মুরাদ ও ওয়াহিদুজ্জামান রানা।