গণমাধ্যমে যা প্রচার হয়েছে, তা ‘ফেব্রিকেটেড’

রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মা নদীতে ইলিশ মাছ ধরার সময় ভারতীয় এক জেলেকে আটক করার ঘটনায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এ ঘটনায় এক সদস্য নিহত হয়েছেন বলে বিএসএফ দাবি করে।
এদিকে বিজিবি জানায়, ওই জেলেকে ফেরত নিতে অনুমতি ছাড়াই বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ওই সময় বিজবি সদস্যরা জানান, পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাঁকে ফেরত দেওয়া হবে। এ সময় বিএসএফের সদস্যরা বিজিবি সদস্যদের মারধর এবং ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে ওই জেলেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। বিজিবিও আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি করে। পরে বিএসএফের সঙ্গে বৈঠক হলে তারা দাবি করে যে তাদের এক সদস্য নিহত হয়েছেন।
পরে এ ব্যাপারে বিজিবি জানায়, নিহতের বিষয়টি তারা নিশ্চিত নয়। কারণ, এমন কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। এ ক্ষেত্রে মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়া খবরগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলেও জানায় বিজিবি।
এ ব্যাপারে গতকাল রাত ৯টার দিকে রাজশাহীতে বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত বলেন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচির আওতায় মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পদ্মা নদীতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালে নদীতে মাছ ধরা অবস্থায় তিন জেলেকে আটক করার চেষ্টা করা হয়। এ সময় দুই জেলে পালিয়ে যায়। একজনকে জালসহ আটক করে নদীর এ পাড়ে, অর্থাৎ আমাদের দিকে নিয়ে আসা হয়। পরে তাঁরা ভারতীয় নাগরিক বলে নিশ্চিত করা হয়।’
জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘ঘটনার কিছুক্ষণ পরই ১১৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কাগমারী ক্যাম্প থেকে চার সদস্যের একটি টহল দল স্পিডবোটে করে আমাদের কোনো অনুমতি ছাড়া সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে ৫০০ থেকে ৬০০ গজের ভেতরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নদীর এ পাড়ে বিজিবির টহল দলের কাছে আসে। এ সময় তাঁরা আটক হওয়া ভারতীয় নাগরিককে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেন। বিজিবি টহল দল আটক ভারতীয় নাগরিককে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে বলে জানায়। কিন্তু তাঁরা বিজিবির কাছ থেকে ভারতীয় নাগরিককে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য মারধর করতে থাকেন। এতে বিজিবি সদস্যরা বাধা দিলে বিএসএফ সদস্যরা আনুমানিক ছয় থেকে আট রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেন। আত্মরক্ষার জন্য বিজিবি টহল দলও পাল্টা ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা গুলিবর্ষণ করতে করতে চলে যান।’
বিজিবি অধিনায়ক আরো বলেন, ‘ওই ঘটনার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৫টা থেকে ৫টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত রাজশাহী বিজিবি ব্যাটালিয়ন ও ১১৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের মধ্যে সীমান্ত পিলার ৭৫/৩-এস থেকে আনুমানিক এক কিলোমিটার অভ্যন্তরে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই পতাকা বৈঠকে বিএসএফ দাবি করে, তাদের এক সদস্য নিহত ও একজন সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় উভয়পক্ষই যার যার অবস্থান থেকে বিষয়টি উপস্থাপন করে। এ বিষয়টি তদন্তের জন্য দুপক্ষই একমত পোষণ করে।’
লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউদ্দিন আরো বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি, বিষয়টি এভাবে দেখার সুযোগ আছে কি না যে ডেকে নিয়ে এসে কাছে আসার পর তাঁদের মেরে ফেলব? আমরা তাদের বলেছি যে, আমাদের লোকজন ড্রাংক না। জাতিগতভাবে আমরা মদ্যপ না। এবং আমরা মানসিকভাবেও সবাই সুস্থ। একটি বাহিনীর সঙ্গে এভাবে সম্পর্ক অবনত করার কোনো ঘটনাও ঘটেনি। এবং এটা একদম ফেব্রিকেটেড ইনফরমেশন। তবে আমরা বলেছি যে, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। এ ধরনের ঘটনা ঘটার কোনো সুযোগ নেই। আমরা তাঁদের ডেকে নিয়ে এসে দেশের মধ্যে গুলি করে মারব, এটার কোনো মানে হয় না।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘মিডিয়াতে যা প্রচার হয়েছে, তা ফেব্রিকেটেড ব্যাপার। মেজর নামে তাদের কোনো পদ নেই, যা মিডিয়ায় এসেছে। তবে বিএসএফ কমান্ড্যান্ট দাবি করেছেন যে, তাঁদের একজন নিহত হয়েছেন ও একজন হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে আমি নিশ্চিত হতে পারছি না, কারণ আমি ডেডবডি এখনো দেখিনি। অফিশিয়ালি লিখিতভাবেও আমার কাছে আসেনি। আমি যা শুনেছি আপনাদের কাছ থেকেই। এবং কমান্ড্যান্টও দাবি করেছেন, তাঁদের একজন নিহত হয়েছেন। তাঁর স্টেটমেন্ট যদি ঠিক থাকে, অবশ্যই এটি অনাকাক্ষিত ঘটনা। তবে উনি আমাকে কোনো ভিডিও দেখাননি, কোনো ফুটেজ দেখাননি।’