শীতে কীটনাশক বিক্রি তিন গুণ বেশি!

পাবনায় শীতকালীন সবজি চাষে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করছেন কৃষক। বছরের তিন মাস (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) অন্যান্য সময়ের তুলনায় কীটনাশক ব্যবহার বেড়ে যায় প্রায় তিন গুণ। এতে করে দিন দিন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে ক্রেতা-ভোক্তাদের।
কৃষকদের দাবি, পোকার আক্রমণ থেকে সবজিকে রক্ষা করতেই কীটনাশক ব্যবহার করছেন তাঁরা। কীটনাশকে উৎপাদিত সবজি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর উল্লেখ করে কৃষক ও ভোক্তা পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। অন্যদিকে কৃষি বিভাগ বলছে, অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন তাঁরা।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার আওতাপাড়া বাজারের কীটনাশক বিক্রেতা আরিফ হোসেন খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় সেপ্টেম্বর থেকে তিন মাস সবজি চাষে কীটনাশক ব্যবহার বেড়ে যায় অনেক। এ সময় কৃষক মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করেন তাঁদের সবজি উৎপাদনে।
‘বছরের নয় মাসে দুই-তিন লাখ টাকার কীটনাশক বিক্রি করি। আর শীতের বাকি তিন মাসে কীটনাশক বিক্রি হয় ছয় থেকে সাত লাখ টাকার’, যোগ করেন আরিফ হোসেন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, দেশে সবজি উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে পাবনা জেলা। দেশের সবজি চাহিদার প্রায় ২০ ভাগ সবজির জোগান আসে পাবনা জেলায় উৎপাদিত সবজি থেকে। জেলায় উৎপাদন হয় ২৭ রকমের সবজি।
এ বছর পাবনায় সবজি আবাদ হয়েছে ২১ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ১৭ হাজার ৬২৩ টন। আবহাওয়া ও মাটি সবজি চাষের উপযোগী হওয়ায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবছর এ জেলায় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সবজি চাষ।
ঈশ্বরদী উপজেলার আওতাপাড়া গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এবং ভালো ফলন পাওয়ার আশায় তাঁরা কীটনাশক ব্যবহার করছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সবজিতে পোকার আক্রমণ বেড়ে গেলে তাঁরা দিনে দুবারও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। সার-কীটনাশক ঠিকমতো ব্যবহার না করলে তো ফসলই পাওয়া যাবে না বলে দাবি তাঁদের।
এ বিষয়ে পাবনার সিভিল সার্জন শহীদ মো. সাদিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, কীটনাশকে উৎপাদিত সবজি মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এসব সবজি খেলে ক্যানসার হতে পারে; কিডনি ও লিভার নষ্ট হয়ে যায়; বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম, বন্ধ্যত্বসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে মানুষ।
এ জন্য বাজার থেকে সবজি কিনে আনার পর পানিতে বেশ কিছু সময় ভিজিয়ে রেখে তার পর সবজি কেটে রান্না করা উচিত। এ ছাড়া কৃষক ও ভোক্তাদের সচেতন করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন সিভিল সার্জন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামারবাড়ির উপপরিচালক বিভূতিভূষণ সরকার বলেন, ‘মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে নানাভাবে কৃষকদের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি আমরা। আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা স্ব-স্ব ব্লকে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন। উপজেলা ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারাও মাঠে গিয়ে কৃষকদের সবজি উৎপাদনে যতটা সম্ভব কম কীটনাশক ব্যবহার করতে বলছেন।’
পাশাপাশি কৃষকদের সঙ্গে উঠান বৈঠক ও আইপিএম, আইসিএম কৃষক মাঠ স্কুলের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এতে করে আগের তুলনায় সবজিতে কীটনাশকের ব্যবহার কমে আসছে বলেও দাবি করেন সিভিল সার্জন।