নতুন নিয়মে চট্টগ্রাম আদালতের কার্যক্রম শুরু

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের হরতাল ও অবরোধের মধ্যেই আজ বুধবার বেলা ২টা থেকে নতুন নিয়মে চট্টগ্রাম আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে হরতালের সমর্থনে সকালে আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল ও সমাবেশ করেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা।
১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে কোনো দল হরতাল আহ্বান করলেই আইনজীবীরা আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকতেন। ফলে ২০-দলীয় জোটের ডাকা টানা হরতালের কারণে দুই মাস ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে চট্টগ্রাম আদালতের বিচারিক কাজে।
এই দীর্ঘ সময়ে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে গতকাল মঙ্গলবার আইনজীবী সমিতির নেতারা দীর্ঘ বৈঠকের পর হরতাল চলাকালে বেলা ২টার পর থেকে আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এই সিদ্ধান্তের কথা প্রচার হওয়ার পর আজ হরতালের মধ্যেও বিচার প্রার্থীদের ঢল নামে আদালত প্রাঙ্গণে। প্রথম দিনেই উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায় আদালত এলাকায়।
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি মুজিবুল হক বলেন, ‘আমরা আগে হরতালে আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকতাম। হরতালে বিচারপ্রার্থীদের আসতে যেন কোনো অসুবিধা না হয় তাই আদালত বসত না। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। মাসের পর মাস অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি চললেও রাস্তায় গাড়ি চলছে। তাই আইনজীবী সমিতি বৃহত্তর স্বার্থে হরতাল চলাকালে আদালত নির্দিষ্ট সময়ে খোলা রাখার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ আদালতে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।’ এই সিদ্ধান্তের কারণে বিচারপ্রার্থী মানুষের পাশাপাশি সবাই খুশি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির নেতা ও সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুস সাত্তার বলেন, ‘পুরো দেশ কারাগারে পরিণত হয়েছে। আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মী আটক রয়েছে। আট ঘণ্টা কর্মসময়ের মধ্যে হরতাল চলাকালে মাত্র তিন ঘণ্টা তাদের আইনগত সহায়তা দিতে পারব।’ তবে হরতাল চলাকালে সকালে আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল-সমাবেশ অব্যাহত রাখবেন বলেও জানান তিনি।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান জানান, আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর জেল থেকে যথাসময়ে বন্দীদের আনা-নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান তিনি।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের হরতালে চট্টগ্রাম আদালতের কার্যক্রম চালু রাখা ও বন্ধ রাখাকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মিছিল-বিক্ষোভ ছাড়াও মঙ্গলবার আদালত চত্বরে বিক্ষুব্ধ আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
২৬ বছর আগে ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি সিদ্ধান্ত নেয়, যে কোনো দল হরতাল আহ্বান করলে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে। কিন্তু বর্তমানে ২০-দলীয় জোটের টানা হরতালের কারণে দুই মাস ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চট্টগ্রাম আদালতের কার্যক্রম।
গত ১ ও ২ মার্চ দুটি আদালতের বিচারক এজলাসে বসলেও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীদের বাধার মুখে বিচারকাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের এক সভা শেষে হরতাল চলাকালে বেলা ২টার পর আদালত বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।