মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাঁদের বিচার হচ্ছে এবং যাঁদের দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টে দিতে হবে।’
আজ শনিবার দুপুরে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির রাজশাহী জেলা, মহানগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনে আলোচকের বক্তব্যে মুনতাসীর মামুন এসব কথা বলেন।
এর আগে নগরীর ভুবনমোহন পার্কে বেলা সাড়ে ১১টায় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল এবং শহীদ পরিবারের সন্তান শাহীনা বেগম।
সম্মেলনে অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘আমাদের দ্বিতীয় পর্যায়ের লড়াই হবে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। এই লড়াইয়ে রাজনীতিবিদরা পাশে না দাঁড়ালেও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
মুনতাসীর মামুন আরো বলেন, ‘৭৫-এর পর থেকে এই ৪০ বছর বিএনপি-জামায়াত ও জাতীয় পার্টির নেতারা ৩০ লাখ শহীদের রক্তের ওপর ব্যবসা করে বিত্ত-বৈভব বাড়িয়েছে। জমি দখল করেছে, দোকান লুট করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আজকে যাদের বিচার হচ্ছে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা না হলে একদিন তাদের উত্তরাধিকারীরা শহীদ পরিবারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। স্বাধীন বাংলাদেশে এটা হতে দেওয়া যাবে না।’
ছাত্রনেতাদের উদ্দেশ করে অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘আপনাদের কাজ হলো সরকারের টাকায় কী করে সংবিধানবিরোধী কথা পড়ানো হচ্ছে, তা সরকারের কাছে প্রশ্ন করা। টেন্ডারবাজি করা আর নেতাদের চামচামি করা আপনাদের কাজ না।’
মুনতাসীর মামুন আরো বলেন, ‘আমাদের দ্বিতীয় লড়াই বিএনপি জামায়াত সৃষ্ট মৌলবাদের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদের প্রতি জিরো টলারেন্সের কথা ঘোষণা করেছেন। আর তার শিক্ষামন্ত্রী তারই টাকায় মৌলবাদ শিক্ষা দিচ্ছেন। একদিকে জামায়াত-হেফাজতের তোষণ, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললে হবে না। এতে তরুণদের বিভ্রান্ত করা হবে। এ ধরনের বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে যদি না দাঁড়াই, আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।’
সম্মেলনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিকে ভিত্তি করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। শহীদজননী জাহানারা ইমামের দেখানো পথে সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে হবে।’
সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘জাগো, জাগাও, ঐক্যবদ্ধ হও, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ কর’। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি ভাষাসৈনিক আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল খালেক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান, ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান, রাজশাহী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মহানগর কমান্ডার ডা. আবদুল মান্নান, মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগারের সভাপতি তাজুল ইসলাম, রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম, কবিকুঞ্জের সাধারণ সম্পাদক কবি আরিফুল হক কুমার, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর রাজশাহী শাখার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মালেক প্রমুখ।