চাঁদা চেয়ে রাবির চার শিক্ষককে হুমকি

সর্বহারা দলের পরিচয়ে চাঁদা চেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চার শিক্ষককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার একই নম্বর থেকে মুঠোফোনে পৃথকভাবে তাঁদের এ হুমকি দেওয়া হয়।
একইভাবে ২০১৫ সালে লালবাহিনী, পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি, চরমপন্থী গ্রুপ কিংবা সর্বহারা দলের পরিচয়ে চাঁদা চেয়ে প্রায় ১৫ জন শিক্ষককে হুমকি দেওয়া হয়। একের পর এক এভাবে হুমকির ঘটনায় শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ওই চার শিক্ষক হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র দাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আজিজুল হক, সহযোগী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম এবং অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি অ্যান্ড ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এস এম কামরুজ্জামান।
অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র দাস এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজ মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে আমার মুঠোফোনে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। আমাকে ফোনে জিজ্ঞাসা করা হয়, রাজশাহী নিউমার্কেট ও সাহেববাজার হকার্স মার্কেটের কিছু ছেলে কি আপনার কাছে গেছে? আমি বলি, তারা আমার কাছে কেন আসবে। তখন অপর প্রান্তে থাকা লোকটি বলে তারা যায়নি কারণ আমরা তাদের শান্ত করে রেখেছি। তখন আমি তাদের মতলব বুঝতে পেরে বলি, মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি। এই বলে আমি ফোন কেটে দেই।’
বিধান চন্দ্র আরো বলেন, ‘আমি কলেজ পরিদর্শকের কাজের সঙ্গে যুক্ত আছি। বাড়ি বানানোর কাজেও হাত দিয়েছি। সব মিলিয়ে আমার তো আর শত্রুর অভাব নেই। এই ঘটনায় ভীষণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছি। আগামীকাল থানায় সাধারণ ডায়েরিও করব।’
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আজিজুল হক ও জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল রাত ১০টার দিকে তাঁদের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে ফোন আসে। ফোনের ওপাশের ব্যক্তি নিজেকে সর্বহারা দলের নেতা তপন বলে পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের ঝামেলা আছে, আমাদের ছেলেরা আপনার কাছে যেতে চাচ্ছে, আমি আটকে রেখেছি।’
তাঁরা আরো জানান, হয়তো হুমকিদাতা তাদের কাছে চাঁদা দাবি করত। কিন্তু তাঁকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। বরং একসময় ও-প্রান্তের লোকটি ‘আপনার সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হবে’ বলে ফোন কেটে দেন।
অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি অ্যান্ড ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এস এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘আজ দুপুর ২টার দিকে একই নম্বর থেকে ফোন করে সর্বহারা দলের জিয়াউদ্দিন জিয়া পরিচয়ে আমার কাছে চাঁদা দাবি করা হয়। আমি বিষয়টি প্রক্টরকে জানিয়েছি। এ ছাড়া এ ব্যাপারে থানায় জিডি করব। একই নম্বর থেকে শিক্ষকদের বারবার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই আমরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তারিকুল হাসান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক বিধান চন্দ্র দাস, এস এম হলের প্রাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম ও ড. এস এম কামরুজ্জামান হুমকির বিষয়টি মুঠোফোনে জানিয়েছেন। বিধান চন্দ্র দাস ও কামরুজ্জামান প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ করা হয়েছে।’
প্রক্টর অধ্যাপক তারিকুল হাসান আরো বলেন, ‘এর আগে যেসব শিক্ষককে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি সেগুলো মাদারীপুর থেকে দেওয়া হয়েছে। এখন যে হুমকিগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো নিয়ে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসব। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে আমার এ বিষয়ে কথাও হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় থানায় প্রক্টর লিখিতভাবে অভিযোগ করবেন বলেও জানিয়েছেন। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’