নানা রঙের ফুলের মেলা রাজশাহীতে

নানা রং আর প্রজাতির ফুল নিয়ে রাজশাহীতে শুরু হয়েছে ওয়ান ব্যাংক পুষ্পমেলা। ফুল সম্পর্কে মানুষের মাঝে আগ্রহ জাগাতে ক্রীড়া সংগঠন ‘বৈকালী সংঘ’ প্রতিবছরের মতো এবারও পুষ্পমেলার আয়োজন করেছে।
আজ শুক্রবার সকালে নগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে মনিবাজার চত্বরে তিনদিনের এ মেলার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংক রাজশাহীর নির্বাহী পরিচালক জিন্নাতুল বাকেয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ওয়ান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফকরুল ইসলাম, বৈকালী সংঘের সভাপতি এ ওয়াই এম মনিরুজ্জামান ছানা ও সাধারণ সম্পাদক রইস উদ্দিন আহমেদ বাবু।
এ ব্যাপারে রইস উদ্দিন বাবু বলেন, ‘আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশীয় ফুলের সঙ্গে বিদেশি জাতের নানা ফুল এখন দেশের উচ্চবিত্ত মানুষের বাগান ও ঘরবাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে শোভা পায়। এগুলো ফুলপ্রেমী মানুষের মনে বাড়তি আনন্দ দিয়ে থাকে। নামি-দামি অনেক ফুল সাধারণ মানুষের চোখে খুব একটা পড়ে না। তাঁরা এ ফুলগুলোর সোন্দর্য উপভোগ করতেও পারেন না। সেদিক বিবেচনা করেই আমাদের এ আয়োজন।’
মেলা আয়োজকদের দাবি, ফুল বিক্রি করা মেলার উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হলো ফুল সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে আগ্রহ আরো বেশি করে জাগিয়ে তোলা এবং ফুলকে চেনা। আবার শহুরে জীবনের গণ্ডি পেরিয়ে সামান্য সময়ের জন্য মানুষকে কিছুটা আনন্দ দেওয়াও এ মেলা আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য। মেলার এবার বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে যোগ করা হয়েছে পুষ্পচিত্র প্রদর্শনী।
মেলার স্টলে স্টলে সাজানো রয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ ও ফুল। দর্শনার্থীরা কেউ একটু হাত দিয়ে ফুল ছুয়ে দেখছেন, আবার কেউ আদরের প্রিয় মুখটিকে ফুলের সৌন্দর্যে রাঙাতে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করে রাখছেন। মেলার উদ্বোধনী দিনেই কেউ এসেছেন বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে, আবার কেউ এসেছেন সপরিবারে। কেউ এসেছেন একা। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষের পদচারণে মেলার প্রথম দিনটিই জমে ওঠে। তবে মেলায় সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল তরুণ-তরুণীদের।
পুষ্পমেলায় আসা রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী সাদিয়া জাহান বলেন, ‘এবারই প্রথম পুষ্পমেলায় এসেছি। এখানে এসে যে এত ভালো লাগবে, ভাবতে পারিনি। এত প্রজাতির ফুল একসাথে দেখতে পেয়ে আমি সত্যি মুগ্ধ হয়ে গেছি। এত আনন্দ আমি অনেক দিন পাইনি।’
মুশফিকা নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একই ফুলের যে এত রং আর এত বৈচিত্র্য হতে পারে, তা এখানে না এলে জানতে পারতাম না। এত প্রজাতির গোলাপ আর বিদেশি ফুল দেখে অনেক ভালো লাগছে। সবচেয়ে বড় কথা, এসব ফুলের সঙ্গে পরিচিত হতে পারছি। আর বিভিন্ন রঙের ফুল চোখের জন্যও ভালো। সত্যিই আয়োজনটা অসাধারণ।’
নগরীর শিরোইল কলোনির গৃহবধূ জেবুন্নেসা বলেন, ‘এমনিতেই আমি ফুল ভালোবাসি। এরপর যখন শুনেছি ফুলের মেলা বসেছে, তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। সঙ্গে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে এসেছি মেলায়।’ তিনি বলেন, ‘ফুল ভালোবাসি বলে আমি সাতদিনের নার্সারির ট্রেনিং নিয়েছি। সেখান থেকে ট্রেনার আমাকে বলেছিলেন ১৫ তারিখে পুষ্পমেলা হয়। তারপর মাইকিং শুনে চলে এসেছি। আমার বাসায় অনেক ফুলের গাছ আছে। আর এখানে এসে নানা জাতের ফুল দেখে মনটা ভরে গেছে।’
রাজশাহী সরকারি নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রবিউল আলম নিশান বলেন, ‘ফুল মানুষের মনে মানসিক প্রশান্তি জাগায়। আর ফুল দিয়েই মানুষের মন জয় করা যায়। শহরের বিভিন্ন নার্সারিতে এসব ফুল পাওয়া যায় জানতাম না। এখন ইচ্ছে করছে সব ধরনের ফুল বাসায় নিয়ে গিয়ে লাগাই।’
পুষ্পমেলায় অংশ নেওয়া গ্রিন অ্যাপেক্স নামের একটি নার্সারির স্টলের পুরো অংশ জুড়ে ছিল বিদেশি নানা ফুলের সমাহারে ঠাসা। ফুল আর ফুলের গাছে সাজানো স্টলের সামনে দর্শনার্থীদের ভিড়ও ছিল বেশি। স্টল মালিক মাসুম বলেন, ‘তাঁর স্টলের সবগুলোই বিদেশি ফুলের গাছ। এর মধ্যে কোনো কোনোটির দাম চার-ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে।’
‘মা নার্সারি’ স্টলে গিয়ে দেখা যায়, এই স্টলেও হরেক রকমের বিদেশি ফুল ও ফুলগাছ রয়েছে। তবে চোখধাঁধানো দেশি ফুলের নানা জাতের গাছ রয়েছে এই স্টলে। স্টল মালিক শামিম জানান, তাঁর স্টলে স্টার, গ্যাজানিয়া, গাদা, গোলাপ, ডালিয়া, জারবেরা, ক্রিজিয়াম, সালেসিয়া, ইফোরবিয়াসহ নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফুল রয়েছে। এগুলোর কোনো কোনোটির দাম ২০ টাকা থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত।’
পুষ্পমেলায় রয়েছে শিশুদের চিত্রাঙ্কন, কবিতা আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশনা। মেলা চলবে আগামী ১৭ জানুয়ারি রাত ৮টা পর্যন্ত।