ছাত্রলীগ কর্মীকে পেটাল, আবার হাসপাতালেও নিল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তিন কর্মীকে পিটিয়েছেন সভাপতি পক্ষের নেতা-কর্মীরা। আজ শনিবার বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রলীগের তিন কর্মী আহত হন।
এদিকে, ছাত্রলীগকর্মী অনিক মোহাম্মদ বনিকে মারপিটের ঘটনায় তাঁর সমর্থকরা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বিনোদপুর গেটে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক ১৫ মিনিট ধরে অবরোধ করে রাখেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
আহত তিন ছাত্রলীগকর্মী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক মোহাম্মদ বনি, লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের সাকিবুল হাসান বাকি এবং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাজ্জাত হোসেন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় বনিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এরা সবাই স্থানীয় ছাত্রলীগকর্মী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, আজ বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের সামনে সভাপতি গ্রুপের বঙ্গবন্ধু হলের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি মেহেদি হাসান, বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান পলাশ, সহসভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি রাজীব শিকদার, তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামানসহ আরো কয়েকজন প্রথমে সাকিবুল হাসান বাকি ও সাজ্জাতকে মারতে থাকে। বিষয়টি দেখে বনি সেখানে গেলে তাঁরা কোনো কারণ ছাড়াই তাঁকে অতর্কিতভাবে পাইপ দিয়ে পেটাতে শুরু করেন। পরে বনি আত্মরক্ষা করতে দৌড়াতে থাকেন। পেছনে সভাপতি পক্ষের নেতাকর্মীরাও ছোটেন। বনি দৌড়ে মেইন গেট দিয়ে বেতারের মাঠ পর্যন্ত চলে যান। সেখানে বনিকে আবার পেটানো হয়। অবস্থা গুরুতর দেখে ওই ছাত্রলীগ কর্মীরাই অটোরিকশায় করে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। অনেক নেতাকর্মী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হলগুলোতে মহড়াও দেয় বলে জানা যায়।
বনির সহযোগী রাজশাহী বিদ্যালয়ের এক ছাত্র বলেন, ছাত্রলীগকর্মী বাকি ও সাজ্জাদের সঙ্গে সভাপতি পক্ষের ছেলেদের ঝামেলা চলছিল। বিষয়টি দেখে বনি ভাই সেখানে গেলে তারা কোনো কারণ ছাড়াই অতর্কিতে তাঁর ওপর হামলা চালায়।
নগরীর মতিহার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অশোক চৌহান বলেন, বিকেল ৪টার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি বৈঠক ছিল। ওই বৈঠকে যাওয়া নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে বনি নামের এক ছাত্রলীগকর্মী আহত হয়েছেন। পরে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তঁবে তার আঘাত গুরুতর নয়।
অশোক চৌহান আরো বলেন, ‘আহত বনির সমর্থকরা বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বিনোদপুরে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় তারা দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তি দাবি করে। আমরা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেয়। এখন সবকিছু শান্ত আছে।’
ছাত্রলীগকর্মী সাকিবুল হাসান বাকি বলেন, মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান রেজা তাঁর খালাতো বোনদের নিয়ে ক্যাম্পাসে বেড়াতে এসেছিলেন। সে সময় ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক পলাশ, সহসভাপতি মেহেদীসহ কয়েকজন মিলে তাঁদের কাছে চাঁদা দাবি করেন। বিষয়টি হাসান রেজা আমাকে জানালে আমি সেখানে যাই। গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁরা আমাদের মারধর করেন।
এ বিষয়ে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা বলেন, ‘কর্মীদের মধ্যে গালাগালির একটি বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পরে বসে আমরা তা ঠিক করে দেব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে আমরা বিষয়টি নিয়ে বসব।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘বনি, বাকিসহ বেশকিছু স্থানীয় ছাত্রলীগকর্মী আছে যারা চরম বেয়াদব। তারা সভাপতিকে মানতে চায় না। আজকে তারা সভাপতির নামে কটূক্তি করে। তাই তাদের মারধর করা হয়েছে।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘বনিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীরা মহানগর আওয়ামী লীগের সমর্থনে চলে। তাই ছাত্রলীগের সভাপতি পক্ষের সঙ্গে তাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছে। এরই জের ধরে আজকের এ মারামারির ঘটনা ঘটেছে।’