সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় সাংবাদিক ও নার্স দম্পতির কলেজপড়ুয়া মেয়ে সুমিত্রা মৃধার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে নাকি তার মৃত্যুর পেছনে অন্য কোনো ঘটনা রয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।

তবে মেঝেতে পড়ে থাকা কলেজছাত্রীর সঙ্গে কারো ধস্তাধস্তি হয়েছে এমন আলামত মিলেছে বলে দাবি পুলিশের। রহস্য ঘনীভূত হয়েছে বাড়ির সিলিংয়ে তাঁর ওড়না ঝুলিয়ে রাখার বিষয়টি নিয়েও।

এদিকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা মেয়েটিকে গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টার পর শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর খবর শুনে এলাকাবাসী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তোলেন।

নিহত সুমিত্রা মৃধা শ্যামনগরের বাদোঘাটা গ্রামের বাসিন্দা দৈনিক সংবাদের শ্যামনগর উপজেলা প্রতিনিধি সাহিত্যিক অরবিন্দ মৃধা ও শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র নার্স সবিতা রানী মৃধার মেয়ে। সুমিত্রা মৃধা শ্যামনগর মহসীন ডিগ্রি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত।

শোকাহত বাবা অরবিন্দ মৃধা জানান, মঙ্গলবার রাতে ঘটনার সময় তিনি যশোরে ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিলেন হাসপাতালে কর্মস্থলে। তিনি জানান, বাড়িতে একা পড়াশোনা করার কোনো একসময় এ ঘটনা ঘটে। রাত ৮টার দিকে তাঁর ছেলে অনুব্রত মৃধা বাসায় ঢুকেই সুমিত্রাকে পড়ে থাকতে দেখে ওর মাকে খবর দেয়। দ্রুত মেয়েকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।

অরবিন্দ মৃধার প্রতিবেশীরা অভিযোগ করেন, সুমিত্রাকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মিজানুর রহমানের কোনো খোঁজ মেলেনি এক ঘণ্টায়ও। সন্ধান মেলেনি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শম্পা রানীরও। চিকিৎসার অভাবে পড়ে থেকে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ।

এই অভিযোগে রাতেই চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে এলাকাবাসী। আজ বুধবার সকালে সুমিত্রার কলেজে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। তারা মৃত্যুর জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করা ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করে আরএমও শম্পা রানী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক মিজানুর রহমান ছিলেন। সিনিয়র নার্স সবিতার মেয়ের খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, আমিসহ আরো দুই চিকিৎসক হাসপাতালে ছুটে আসি। কিন্তু আমরা এসে দেখি মেয়েটি মৃত। নার্স সবিতাও বিষয়টি দেখেছেন। তিনিও তো মেয়ের অবস্থা দেখেছেন। তিনি তো কোনো অভিযোগ করছেন না।’

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক জানান, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়।

থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুর রহমান জানান, কলেজছাত্রী সুমিত্রার দেহে কোনো ধরনের আঘাতের চিহ্ণ পাওয়া যায়নি। তবে ধস্তাধস্তির আলামত পাওয়া গেছে। তার ওপর যৌন নির্যাতন চালানোর কোনো প্রাথমিক আলামতও মেলেনি বলে জানান তিনি।

কালীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মনির হোসেন জানান, সুমিত্রার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।