ফরিদপুরকে মাগুরার না, যশোরকে হ্যাঁ

প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগে যেতে চায় না মাগুরাবাসী। বরং তারা যশোরকে বিভাগ ঘোষণা করে সেখানে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে।
এই দাবি আদায়ে আজ রোববার মাগুরা শহরে বিশাল মানববন্ধন করেছে সংগ্রাম পরিষদ, মাগুরা ও যশোর বিভাগ আন্দোলন পরিষদ, মাগুরা জেলা শাখা। একই দাবি জানিয়ে যশোর বিভাগ আন্দোলন পরিষদ ও বৃহত্তর যশোর সমিতি ঢাকা বৈঠক করে ফরিদপুর বিভাগের সঙ্গে মাগুরাকে যুক্ত করার চেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। যশোর ও মাগুরা জেলা বর্তমানে খুলনা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত। আর ফরিদপুর ঢাকা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত।
এর আগে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টার প্রতিবাদে আন্দোলন করেছে শরীয়তপুর জেলার বাসিন্দারা। তারা বর্তমান ঢাকা বিভাগের সঙ্গেই রাখার দাবি জানিয়েছে।
এদিকে আজ সকাল ১০টায় মাগুরা শহরের এম আর রোডে বিশাল মানববন্ধন হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী, গৃহিণীসহ সর্বস্তরের জনগণ ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে মানববন্ধনে অংশ নেয়।
এ সময় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন মাগুরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোল্লা নবুয়ত আলী, প্রফেসর মোল্লা আবু সাইদ, প্রফেসর সূর্যকান্ত বিশ্বাস, বণিক সমিতির সভাপতি মুন্সী হুমায়ুন কবীর, প্রবীণ শিক্ষক চিত্তরঞ্জন শিকদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় নেতা হারুন অর রশীদ, দৈনিক কল্যাণ পত্রিকার সম্পাদক একরাম উদদৌলা, যশোর বিভাগ আন্দোলনের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান খান, সাংবাদিক আবু বাসার আখন্দ, সাংবাদিক অলোক বোস, রানা আমির ওসমান প্রমুখ।
বক্তারা বৃহত্তর যশোরের সংস্কৃতি রক্ষার স্বার্থে অবিলম্বে মাগুরা জেলাকে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগ থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানান। অন্যথায় দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। একই সঙ্গে তাঁরা যশোরকে বিভাগ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান। দাবি মানা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুমকিও দেন বক্তারা।
মানববন্ধন শেষে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করে।
যশোর বিভাগ আন্দোলন পরিষদের বৈঠক : পরিষদের সদস্য সচিব হাসানুজ্জামান বিপুলের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর নীলক্ষেতের বাবুপুরায় বৃহত্তর যশোর ভবনে বৈঠক করে যশোর বিভাগ আন্দোলন পরিষদ ও বৃহত্তর যশোর সমিতি, ঢাকা। বৈঠকে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের সঙ্গে মাগুরাকে যুক্ত করার ষড়যন্ত্রের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
সেখানে দীর্ঘ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলা হয়, বৃহত্তর যশোর তথা মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ ও যশোরকে নিয়ে একটি পৃথক বিভাগ ঘোষণার দাবি নিয়ে যখন আন্দোলন চলছে, সে সময় মাগুরাকে ফরিদপুর বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত করার অপচেষ্টা একটি নতুন ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই না। বৃহত্তর যশোরের কোটি মানুষ চেয়ে আছে কখন বৃহত্তর যশোরকে নিয়ে একটি আলাদা বিভাগ করা হবে। কিন্তু সে দাবি যেন পূরণ না হয় সে লক্ষ্যে কিছু ব্যক্তি সরকারপ্রধানকে ভুল বুঝিয়ে এই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে বক্তারা দাবি করেন।
ইতিমধ্যে জানা গেছে, মাগুরার লাখ লাখ মানুষ ফরিদপুর বিভাগের সঙ্গে যেতে চায় না, কারণ তাদের পৃথক পরিচয় আছে। বৃহত্তর যশোরের সঙ্গে মাগুরার ভাষা, সংস্কৃতিসহ সব দিক দিয়ে মিল রয়েছে। এই ঐতিহ্য কয়েক শ বছরের। একটি পৃথক জেলা হওয়া সত্ত্বেও এখনো মাগুরাবাসী যশোরের মানুষ বলে পরিচয় দেয়। অন্যদিকে ফরিদপুরের সঙ্গে মাগুরার এই সম্পর্ক অনেক দূরের।
মাগুরার সঙ্গে যশোরের সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। সড়ক পথে যাতায়াত করতে এক ঘণ্টারও কম সময় প্রয়োজন হয়। তাই মাগুরাকে ফরিদপুর বিভাগের সঙ্গে যুক্ত করার নতুন এই তৎপরতা মাগুরাবাসী কিছুতেই মানবে না। অবিলম্বে এই তৎপরতা বন্ধ করে বৃহত্তর যশোরকে নিয়ে যশোর বিভাগ করার দাবি জানানো হয় প্রতিবাদ সভায়। একই সঙ্গে এই ধরনের তৎপরতা অব্যাহত থাকলে মাগুরাবাসীর পক্ষ থেকে জোর আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই তৎপরতা বন্ধ না করলে ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করার বিষয়ে উপস্থিত সবাই একমত পোষণ করে।
বৃহত্তর যশোরবাসীকে যশোর বিভাগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সোচ্চার কণ্ঠে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৈঠকে বক্তব্য দেন বৃহত্তর যশোর সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী রফিকুল ইসলাম, যশোর বিভাগ আন্দোলন পরিষদ ঢাকার আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সাত্তার, সদস্য সচিব হাসানূজ্জামান বিপুল, ন্যাপের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও যশোর বিভাগ আন্দোলন পরিষদ যশোরের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এনামুল হক, লায়ন্স ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হাবিব ফিরোজ, যশোর ইনফো ফাউনডেশনের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সিদ্দিকী, বৃহত্তর যশোর ওয়েবসাইট কমিটির সভাপতি ভবতোষ মুখার্জি সুবীর, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ অধ্যাপক হাসান আব্দুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মিয়া সিরাজুল ইসলাম, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সৈলন্দ্র নাথ সাহা, জামাল উদ্দিন আহমেদ, মোজাফফর এইচ জোয়ার্দার, মুহা. আকতারুজ্জামান, নাসিরুল ইসলাম নাসির, হাবিবুর রহমান, মো. জাকির হোসেন, মেহেদী আল মামুন, তৌহিদ আহম্মেদ পিন্টু, মনিরুল ইসলাম মুন্না প্রমুখ।