মায়ের কবরের পাশে চিরশায়িত ঢাবি ছাত্র সাম্য

দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যকে (২৫) তার গ্রামের বাড়ির কবরস্থানে মা ও দাদির কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে। বুধবার (১৪ মে) রাত সোয়া ১০টার দিকে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের সড়াতৈল গ্রামের ‘জান্নাতুল-বাকী’ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এদিন সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে সাম্যর মরদেহ বহনকারী গাড়ি গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছে। এ সময় হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখা যায়।
স্বজন ও প্রতিবেশীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে এক নজর দেখতে ভিড় করেন। কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। এরপর রাত ১০টার দিকে সড়াতৈল মাদরাসা মাঠে সাম্যর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সেরাজুল ইসলাম সেরাজ, বেলকুচি উপজেলা জামায়াতের আমির আরিফুল ইসলাম সোহেলসহ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
জানাজার আগে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ‘ছাত্রদল নেতা সাম্য মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। কলেজ ক্যাম্পাসে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সরকার ও পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি। আমরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করছি। প্রশাসন এতে ব্যর্থ হলে আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে তা আদায় করতে বাধ্য হব।’
সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যদি এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে সঠিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন, তাহলে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সিরাজগঞ্জ থেকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
সাম্য সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের সড়াতৈল গ্রামের ফখরুল আলম ফরহাদের ছেলে। সাম্যের হঠাৎ এমন মৃত্যু যেন কেউই মেনে নিতে পারছেন না।
নিহত শাহরিয়ার আলম সাম্যর মা কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনিই সবার ছোট। সাম্যের বড় চাচা ডা. কাউসার আলম বলেন, ‘সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিল। (মঙ্গলবার দিনগত) রাতে জানতে পাড়ি সাম্যকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খুন করা হয়েছে। জানি না কোন অপরাধে আমার ভাতিজাকে খুন করা হলো। এই মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর আত্মীয় স্বজন অনেকেই ঢাকা চলে গেছে।’
এর আগে গত মঙ্গলবার দিনগত রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুক্তমঞ্চের পাশ দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন সাম্য। এ সময় আরেকটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। এরই একপর্যায়ে সাম্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান পায়ে আঘাত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।