২ আসামির জামিন, হুমকির অভিযোগ

রাজশাহীর পবা উপজেলায় দুই শিশু নির্যাতনের মামলার দুই আসামি গতকাল সোমবার বিকেলে বিচারিক হাকিম আদালতের মাধ্যমে জামিন পেয়েছেন।
ওই দুই আসামিসহ অন্য আসামিরা নির্যাতিত শিশুদের পরিবারের সদস্যদের মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আসামিদের অব্যাহত হুমকির কারণে বাড়ি ফেরা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন নির্যাতিত শিশুদের পরিবারের সদস্যরা।
রাজশাহী আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট রাশেদ উন নবী আহসান জানান, দুই শিশু নির্যাতনের মামলায় সোমবার আসামি আজিজুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে উজ্জ্বল হোসেন পবার আমলি আদালতের আদেশে জামিন পেয়েছেন। আজ মঙ্গলবার একই মামলায় আরো সাত আসামি জামিনের আবেদন করেন। এটা দেখে বিচারকের সন্দেহ হয়। পরে তিনি নির্যাতিত শিশুদের বয়স দেখে ধরে ফেলে বলেন, এটা শিশু আদালতে বিচার্য মামলা। তিনি তখনই মামলাটি শিশু আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। শিশু আদালতে এ মামলা জামিনযোগ্য নয় দেখে আসামি পক্ষের আইনজীবী জামিনের আবেদন প্রত্যাহার করে নেন। পরে আসামিরা আদালত চত্বর থেকে কেটে পড়েন।
এদিকে আজ মঙ্গলবার পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, নির্যাতিত শিশু জাহিদ হাসান ও ইমন আলীকে পাশাপাশি শয্যায় রাখা হয়েছে। জাহিদের পাশে রয়েছেন তার মা শিউলী বেগম। ছেলে কেমন আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছেলে এখনো নিজে থেকে উঠে দাঁড়াতে পারছে না। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আপাতত সুস্থ হলেও ছেলের পরে সমস্যা হবে।’
শিউলী বেগম বলেন, তিনি লোকমুখে শুনছেন আসামিরা তাঁদের হুমকি দিয়েই যাচ্ছে। ছেলের বাবাকে একা পেলে মেরে লাশ গোপন করে ফেলবে। আসামিরা বলছে, এইটুকু ঘটনা নিয়ে ওরা যদি এত বাড়াবাড়ি করে, মামলা যদি তুলে না নেয়, তাহলে ওদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, গত রোববার বিকেলে তাঁর ছোট ছেলে নাহিদ হাসান জামা-কাপড় আনতে বাসায় গিয়েছিল। আসামি পলাশ ছেলেকে দেখতে পেয়ে ধরার জন্য ধাওয়া করেছিল। তার ছেলে বিল দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে এসেছে। বাড়ি ফেরা নিয়ে তাঁরা চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলে জানান শিউলী বেগম।
শিশু ইমনের কাছে তার দাদি আছিয়া খাতুন রয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁর নাতি এখনো উঠে দাঁড়াতে পারছে না।
পবা উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রিজাউল হক চৌধুরী বলেন, নির্যাতিত শিশুদের নিজে থেকে হাঁটতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে।
বিক্ষোভকারীদের পুলিশের ধমক : এদিকে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পবার বাগসারা এলাকায় জাহিদ ও ইমনের সহপাঠীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করার চেষ্টা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুলিশ তাদের ধমক দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশ চলে যাওয়ার পরে তারা ‘আর্মি নাসিরের বিচার চাই, পুলিশ সাগরের বিচার চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় তানোর-রাজশাহী সড়কে বেশ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে আবারও তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, একই কর্মসূচি আগের দিন করেছে। আবার কী দরকার? এ জন্য তিনি ধমক দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছেন।
মামলাটি শিশু আদালতে না পাঠানোর ব্যাপারে ওসি বলেন, এটা কোর্ট জিআরওর দায়িত্ব।
মুঠো ফোনসেট চুরির অভিযোগ এনে গত শুক্রবার দুপুর থেকে পবা উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামের দুই শিশু জাহিদ হাসান ও ইমন আলীকে ঘরের ভেতরে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়। এই দুই শিশু পবার বাগসারা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। জাহিদের বাবা একজন ভ্যানচালক। ইমনের বাবা-মা কেউ নেই। সে দাদার কাছে থাকে।