মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর আপিলের শুনানি ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে এ মামলার শুনানি শুরু হয়ে চলে বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত। এর পর আদালত ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন—বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি বজলুর রহমান।

শুনানিতে ট্রাইব্যুনালের রায় ও অভিযোগগুলো উপস্থাপন ও প্রাথমিক যুক্তি খণ্ডন করা হয়।

আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এস এম শাহজাহান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এর আগে গত ৬ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ মামলা শুনানির জন্য ২ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা এটি ছিল সপ্তম মামলা।

২০১৪ সালের ২ নভেম্বর তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় মীর কাসেম আলীর পক্ষে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন তুহিন ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর আপিল দায়ের করেন। মীর কাসেমের পক্ষে ১৮১টি যুক্তিতে (গ্রাউন্ড) মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে এ আপিল করা হয়েছে। ১৫০ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ পাঁচ খণ্ডে (ভলিয়ম) এক হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠায় বিভিন্ন নথি পেশ করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রসিকিউশন আনীত ১৪টির মধ্যে মোট ১০টি অভিযোগে মীর কাসেম আলী দোষী প্রমাণিত হন। সেগুলো হলো—২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ। এর মধ্যে দুটিতে (১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে) মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া চারটি অভিযোগে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।

১১ নম্বর অভিযোগে রয়েছে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ছয়জনকে আটক, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ। এ অভিযোগে বিচারকরা সর্বসম্মতিক্রমে মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। ১২ নম্বর অভিযোগে রয়েছে রঞ্জিত দাস ও টুন্টু সেনকে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ। এ অভিযোগে বিচারকদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেওয়া হয়। ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগ ছাড়া বাকি ১২টি অভিযোগই অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ মীর কাসেমের বিরুদ্ধে।

প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ২ নম্বর অভিযোগে তাঁকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাঁকে সাত বছর করে মোট ৪২ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৪ নম্বর অভিযোগ ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই আটটি অভিযোগে তাঁকে সর্বমোট ৭২ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

তবে ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় কাসেম আলীকে এসব অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়।