‘স্কুলে শহীদ মিনার নাই, তাই ফুল দিতে পারি না’

মেহেরপুর জেলায় অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজো গড়ে ওঠেনি শহীদ মিনার। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ফুল দিয়ে শহীদদের সম্মান জানাতে পারে না। অনেক প্রতিষ্ঠানে শুধু জাতীয় পতাকা তুলেই দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষকরা। কোনো আলোচনা সভা না করায় ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে কিছুই জানতে পারে না শিক্ষার্থীরা।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, জেলায় সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলায় মোট ১২৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২৬টি মাদ্রাসা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মাত্র ৩৮টি বিদ্যালয় আর সাতটি মাদ্রাসায় শহীদ মিনার রয়েছে।
এ ছাড়া রয়েছে ১৬৩টি সরকারি ও ১৪৩টি রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ও ১২৯টি কেজি স্কুল। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও কোনো শহীদ মিনার নেই। ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অমর একুশে, ভাষা আন্দোলন কিংবা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুল দিয়ে শহীদদের সম্মান জানাতে পারে না।
যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে, সেগুলোও রয়েছে অযত্ন আর অবহেলায়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একুশে ফেব্রুয়ারির দিন বন্ধ থাকে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে স্থানীয় রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান মাঝেমধ্যে ফুল দিয়ে থাকে। এখানে ভাষা আন্দোলন বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কোনো আলোচনা সভাও হয় না। শুধু পতাকা উত্তোলন করা হয়। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্পর্কে তেমন কিছুই শিখতে বা জানতে পারছে না।
মেহেরপুর সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী মৌসুমি আকতার বলে, ‘প্রভাতফেরি ও শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়। শহীদ মিনার না থাকায় আমরা ফুল দিয়ে সম্মান জানাতে পারি না।’
একই বিদ্যালয়ের আরেক ছাত্রী সুমি জানায়, শহীদ মিনার না থাকায় ছাত্ররা বাঁশ দিয়ে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার তৈরি করে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি সম্মান জানায়।
এদিকে গাংনী উপজেলার চিৎলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র মোমিন বলে, ‘ভোরে স্যাররা পতাকা তুলতে বলে। তাই পতাকা তুলে বাড়ি আসি। কোনো আলোচনা কিংবা মিলাদ হয় না। বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকলে ফুল দিয়ে শহীদদের সম্মান জানানো যেত।’
গাড়াডোব গ্রামের অভিভাবক ইলিয়াছ হোসেন বলেন, স্কুলে যদি শহীদ মিনার থাকত, তাহলে তাঁদের সন্তানরা ভাষা আন্দোলনের শহীদদের ভালোমতো স্মরণ করে দিনটি উদযাপন করতে পারত। ভাষা দিবস সম্পর্কে জানতে হলে বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার থাকা দরকার।
গাংনী উপজেলার আমতৈল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের সম্মান জানানোর জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা উচিত। এতে করে সবাই শহীদদের প্রতি যেমন সম্মান জানাতে পারে, তেমনি শিক্ষার্থীরা এ দিবসটির তাৎপর্য বুঝতে পারবে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ গোলদার জানান, সরকারি উদ্যোগে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন করা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবসে অন্তত ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো উচিত।
তা ছাড়া দিবসটি কী এবং এর তাৎপর্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুলে ধরতে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার হবে।
জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম জানালেন, এরই মধ্যে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অতি শিগগির তা বাস্তবায়ন হবে।