মুক্তিযোদ্ধা হত্যায় আটক ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ
কুড়িগ্রাম শহরের গাড়িয়ালপাড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান হোসেন আলী সরকারকে (৬৫) হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন পাঁচজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সদর থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় হোসেন আলীর পুত্র রুহুল আমিন আজাদ বাদী হয়ে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি।
কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ তবারক উল্ল্যাহ বলেন, ‘হোসেন আলী হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত। আমরা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছি। সেই সাথে তাঁর ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও জমাজমি নিয়ে বিরোধের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করছি খুব শিগগিরই বিষয়টি উন্মোচিত করতে পারব।’
এদিকে কুড়িগ্রামে ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান হোসেন আলী সরকারকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। বিশ্বব্যাপী জঙ্গি কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের (এসইটিই) বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আইএসের একটি টুইট বার্তার বরাত দিয়ে এসইটিই জানিয়েছে, অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য এই ধর্মপ্রচারককে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে আইএস।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, গত কয়েক মাসে দুজন বিদেশিকে হত্যা, সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর হামলা, ধর্মীয় বিভিন্ন গ্রুপের ওপর হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। কিন্তু পুলিশের দাবি, এসব হামলার নেপথ্যে আছে স্থানীয় জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন।
এদিকে স্থানীয় পুলিশ বলেছে, হোসেন আলী ১৯৯৯ সালে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হন। তবে তিনি ধর্ম প্রচারক ছিলেন না।
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে নিজ বাড়ির কাছাকাছি ধর্মান্তরিত খ্রিস্টধর্মীয় মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলীকে গলা কেটে হত্যা করে মোটরসাইকেল আরোহী তিন অজ্ঞাত যুবক। এ সময় স্থানীয়রা এগিয়ে এলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা সটকে পড়ে।
হত্যাকাণ্ডের পর গতকাল মঙ্গলবার কুড়িগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) ডা. মোহাম্মদ তোবারক উল্লাহ বলেছিলেন, মর্নিংওয়াক করার সময় তিন হামলাকারী হোসেন আলীকে কোপায়। এরপর তারা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
আর আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ সুপার তোবারক উল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আইএস জঙ্গি দ্বারা নাকি অন্য কোনো কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা তদন্তের আগে বলা যাচ্ছে না। তবে এ হত্যাকাণ্ডটির মোটিভ দেখে আমরা ধারণা করছি, এটি পরিকল্পিত মার্ডার। এ ছাড়া পারিবারিক কিংবা সামাজিক কোনো কারণে কেউ তাকে হত্যা করেছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী প্রায় ১৭ বছর আগে (১৯৯৯ সালে) সপরিবারে ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টানধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন।
নিহত হোসেন সরকারের ছেলে রুহুল আমিন আজাদ বলেন, ‘আমার বাবা একজন ভালো মানুষ। আমার জানা মতে তাঁর কোনো শত্রু ছিল না। তবে রংপুরের মাহিগঞ্জ এলাকার পরিচয় দিয়ে আবুল বাশার নামে এক যুবক এ মাসের প্রথম সপ্তাহে বাসা ভাড়া নেন। বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় সে নেকসাস মোবাইল কোম্পানিতে চাকরি করেন বলে পরিচয় দেন। ঘটনার আগের দিন সকাল ১০টা সে বাসায় এসে রুমের চাবি দিয়ে পরে আসবেন বলে চলে যান। আবুল বাশারের মোবাইল ফোন নম্বরটি আমার বাবার মোবাইলে সেভ করা থাকলেও তা কৌশলে মায়ের কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি নিয়ে ডিলেট করে দেন।’
নিহতের ছোট ভাই কোকন আলী বলেন, ‘আমার ভাই ১৯৯৯ সালে মুসলিম ধর্ম থেকে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। এ কারণে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’