খুলনায় আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীদের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ

খুলনা জেলায় আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীদের সরকারের পক্ষ থেকে গত এক বছরে কোনো ওষুধ সরবরাহ করা হয়নি। রূপসা উপজেলার দণি খাজাডাঙ্গা গ্রামের আর্সেনিক দূরীকরণ প্ল্যান্টটিও বছর দেড়েক ধরে অকেজো হয়ে আছে। সেটিও মেরামতের উদ্যোগ নেই। আর দাকোপ ও কয়রা উপজেলায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, খুলনায় আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫৯৭ জন। এর আগে ২০১২ সালে সর্বশেষ জরিপ পরিচালনা করা হয়।
এর আগে ২০০৩ সালের জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপের পর সব সরকারি-বেসরকারি নলকূপ আর্সেনিকযুক্ত হলে তাতে লাল রং করা হয়। তবে যেসব এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উপযোগী, সেখানে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। আর দণি খাজাডাঙ্গা গ্রামে অগভীর নলকূপের পানি আর্সেনিকযুক্ত, তাই ওই এলাকায় প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়।
২০০৩ সালের জরিপ অনুযায়ী, জেলায় নলকূপে আর্সেনিক দূষণের হার ছিল শতকরা ৪১ দশমিক ৫ ভাগ। তখন পরিবারের সংখ্যা ছিল তিন লাখ ১১ হাজার ৫৫০টি। আর নলকূপ আর্সেনিক আক্রান্ত গ্রামের সংখ্যা ছিল ১৮৬টি। ২০০৩ সালের পর থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীর কোনো পরিসংখ্যান করা হয়নি।
২০০৩ সালে জেলার ৫৯ হাজার ৮০০টি অগভীর নলকূপের পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৬৯৩টি নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের সন্ধান পাওয়া যায়।
গত এক যুগে রূপসা ও দীঘলিয়া উপজেলায় আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রূপসার টিএসবি ইউনিয়নে ১৯৯৩ সালে আর্সেনিকে আক্রান্ত হন দণি খাজাডাঙ্গা গ্রামের সুজা সরদার, হেলেনা বেগম ও খলিলুর রহমান। বছর তিনেক আগে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।
২০০৩ সালে রূপসার টিএসবি ইউনিয়নের অগভীর নলকূপে শতকরা ৮০ ভাগ আর্সেনিক পাওয়া যায়।
টিএসবি ইউনিয়নের দণি খাজাডাঙ্গা গ্রামের শেখ আলতাফ হোসেন জানান, এক যুগ ধরে তিনি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রথম পর্যায়ে এ রোগের ওষুধ দেওয়া হতো। কিন্তু এক বছর ধরে হাসপাতাল থেকে ওষুধ দেওয়া হয় না। আর দেড় বছর ধরে ওয়াটার প্ল্যান্টটি বন্ধ হয়ে আছে। এতে এলাকার তিন শতাধিক পরিবার বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারছে না।
একই গ্রামের কিতাব আবদুর হাই সরদার জানান, তাঁদের গ্রামের পানির প্ল্যান্টটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। আগে আর্সেনিকে আক্রান্তদের রোগের ওষুধ দেওয়া হতো। এখন সেটা আর দেওয়া হয় না।
দীঘলিয়া উপজেলার ফরমাইশখানা গ্রামের পারভীন খাতুন জানান, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে তিনবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা নিতে গেছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তারা কোনো সময়ই তাঁর হাতে ওষুধ তুলে দেননি।
রূপসার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আবদুল গফ্ফার মোল্লা বলেন, ‘লৌহের আধিক্য বেশি হওয়ায় টিএসবি ইউনিয়নের দণি খাজাডাঙ্গা গ্রামের কমিউনিটিভিত্তিক আর্সেনিক দূরীকরণ প্ল্যান্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে আগামী সপ্তাহে এ অকেজো প্ল্যান্টটি যাতে উপযোগী করা যায়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
সিভিল সার্জন ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি মাসে উপজেলা পর্যায়ের প্রতিবেদনে আর্সেনিকে আক্রান্ত নতুন কারো নাম আসেনি। মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা এ বিষয়ে খুবই সচেতন। সন্দেহজনক কাউকে চিহ্নিত করা গেলে তাঁকে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনা হবে। আর ওষুধ নাই তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।