মঙ্গলগ্রহে বাস করলেও কৃষির ওপর নির্ভরশীলতা থাকবে

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শনিবার উৎসবমুখর পরিবেশে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। তিনি বলেন, ‘কৃষিই আদি সভ্যতার উৎস এবং কৃষি আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে। আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুবাদে কৃষির অনেক সমৃদ্ধি হয়েছে, সভ্যতার চরম উৎকর্ষ হয়েছে। তবে আমরা যতই উন্নতির চরম শিখরে উঠি না কেন, এমনকি আমরা যদি মঙ্গলগ্রহেও বসবাস করি, তা হলেও আমাদের খাদ্যের জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীলতা থাকবে। তাই কৃষির গুরুত্ব অতীতেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।’
মৎস্য প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রতিবেশ ও পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে, এর প্রভাবে কৃষি সেক্টরেও বিরূপ প্রভাব লক্ষণীয়। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি কৃষিবিদ ও কৃষিবিজ্ঞানীদের নতুন নতুন গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং আঞ্চলিক সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, একেকজন কৃষক, একেকজন খুদে বিজ্ঞানী, গবেষক। তাঁদের গুরুত্ব দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নই এ দেশের কৃষকের স্বপ্ন, তিনি কৃষকদের নিয়ে ভাবতেন, কৃষির উন্নতি নিয়ে ভাবতেন। তাঁর সেই স্বপ্ন আজ সার্থকতা লাভ করতে চলেছে তাঁরই মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। বাংলাদেশের অতীতের কোনো সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এতটা সামগ্রিক সুসমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেনি।
মৎস্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার কৃষির উন্নতির ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন ও আন্তরিক। তাই এ ক্ষেত্রে নানামুখী পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। তিনি কৃষিশিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে নতুন নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণ ও দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য কৃষিবিদ ও গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশে কৃষিশিক্ষায় স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরিতে সক্ষম হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানান এবং এই ডিসিপ্লিন থেকে শিক্ষালাভকারী গ্রাজুয়েটদের কৃষিক্ষেত্রে কেবল চাকরি নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বক্তব্য দেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করেছে। নানা ক্ষেত্রে অগ্রগতি লাভ করছে। তবে শিল্পের চেয়ে এ ক্ষেত্রে কৃষির অবদান বেশি। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবার শেকড় কৃষিতে। আমাদের এই এগিয়ে যাওয়ার পেছনে কৃষক ও কৃষিবিদদের মুখ্য ভূমিকা রয়েছে।’
উপাচার্য বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি সম্পর্কিত অনেকগুলো ডিসিপ্লিন রয়েছে। এসব ডিসিপ্লিনের জন্য মাঠ গবেষণার জন্য জমি প্রয়োজন, যা আমি সমাবর্তন বক্তব্যেও তুলে ধরি।’ তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ প্রয়োজন। এ জন্য জমি বরাদ্দের ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বশীর আহমেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কোষাধ্যক্ষ খান আতিয়ার রহমান, জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুল লতিফ।
এ ছাড়া সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানা ও ডিসিপ্লিনের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
এর আগে ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সকাল ৯টায় ক্যাম্পাসে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য মিছিল বের হয়। পরে স্মৃতি রোমন্থন, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়।