এই রেজাল্ট দিয়ে কী করবে হৃদয়ের বাবা

এ বছর মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় সব বিষয়ে ভালো করলেও ‘হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়ে ফেল করে বরিশালের সর্বজিৎ ঘোষ হৃদয়। এ ফলাফল মেনে নিতে না পেরে সাততলা ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে এই কিশোর। আজ শনিবার ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের পর জানা গেল, হৃদয় পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হৃদয়ের অকৃতকার্য হওয়ার বিষয়টি এসেছিল। এ রকম আরো অনেক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রেই হয়েছে।
হৃদয়ের পাস করার এ বিষয়টি এখন তাঁর পরিবারের জন্য আরো কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে। হৃদয়ের বাবা-মায়ের মুখে এখন একটাই বিলাপ, এই রেজাল্ট দিয়ে আমরা এখন কী করব?
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান পরীক্ষকের অসতর্কতার কারণে ‘হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়ে ‘গ’ সেটের নৈর্ব্যক্তিক উত্তরপত্র ‘খ’ সেটের নৈর্ব্যক্তিক উত্তরের স্থলে কম্পিউটারে সেটিং করায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে ফল বিপর্যয় হয়েছে। অস্বাভাবিক ফল দেখে প্রথমে সমস্যা চিহ্নিত করা হয়। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে হিন্দুধর্মের সব নৈর্ব্যক্তিক উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়ন করে গতকাল শুক্রবার বিকেলেই বোর্ডের ওয়েবসাইটে সংশোধিত ফল ঘোষণা করা হয়।
শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়ে প্রায় এক হাজার ২০০ পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এদের মধ্যে ৯০ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে। এই পুনর্মূল্যায়নের কারণে বোর্ডে পাসের হার বাড়বে। আপাতত সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এরপর পাসের হার এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, দুই প্রধান পরীক্ষক বরিশাল নগরীর বিএম স্কুলের শিক্ষক জুরাইন চক্রবর্তী ও বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিবিচিনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বীরেন চক্রবর্তীর ভুলের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
এর আগে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে ফেল করা আড়াই শতাধিক পরীক্ষার্থী উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের আবেদন জমা পড়ে।
সংশোধিত ফলাফল জানার পর হৃদয়ের বাবা শেখর ঘোষ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘গত বুধবার এসএসসির ফলাফল জানতে আমার সঙ্গে স্কুলে ছুটে যায় হৃদয়। সেখানে বোর্ডে টানানো ফলাফলে জিপিএ ৫-এর ঘরে হৃদয় তাঁর রোল নম্বর খুঁজতে থাকে। শুধু জিপিএ ৫ নয়, কোথাও তাঁর রোল নম্বর ছিল না। হৃদয় জানতে পারে হিন্দুধর্ম বিষয়ে সে ফেল করেছে। অভিমানী হৃদয় বাসায় ফেরার পথে নগরীর প্যারারা রোডের সাততলা ভবনের চারতলায় উঠে লাফিয়ে পড়ে।
নগরীর উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল হৃদয়। ওই স্কুলের শিক্ষক পংকজ কুমার মণ্ডল জানান, তাঁদের বিদ্যালয় থেকে চারজন হিন্দু শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। বুধবারের প্রকাশিত ফলাফলে তাদের সবারই ফলাফল ফেল আসে। কিন্তু পুনর্মূল্যায়নের পর হৃদয় ঘোষসহ চারজনই জিপিএ ৫ পেয়েছে।
শুধু উদয়ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা নয়, বোর্ডের অধীন অনেক স্কুলের শিক্ষার্থীই ‘হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়ে ফেল করেছিল। বরিশাল জিলা স্কুল, বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, অক্সফোর্ড মিশন হাইস্কুল, বানারীপাড়া ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খাঞ্জাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরফুন্নেচ্ছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়ে ফেল করেছিল।
ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ও হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের সেরা ১০ ছাত্র হিন্দুধর্ম বিষয়ে ফেল করেছিল। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মু. শাহ আলমগীর জানান, হিন্দুধর্ম বিষয়ে পরীক্ষার্থী ছিল প্রায় সাড়ে নয় হাজার। এর মধ্যে ‘খ’ সেটের প্রশ্নপত্র পায় প্রায় এক হাজার ২০০ পরীক্ষার্থী। তাদের ফলাফলে বিপত্তি ঘটে। নৈর্ব্যক্তিকের উত্তরপত্রের ওএমআর শিট কম্পিউটারে দেখা হয়। যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে এমনটা হয়েছে।
বুধবার প্রকাশিত এসএসসির ফলাফলে বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৯ দশমিক ৪১ ভাগ। জিপিএ ৫ পেয়েছিল তিন হাজার ১১৩ জন। এর আগে ২০১৫ সালে বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৪ দশমিক ৩৭ ভাগ এবং ২০১৪ সালে পাসের হার ছিল ৯০ দশমিক ৬৬ ভাগ।